বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১১

মুঠোফোনে আপত্তিকর ভিডিও, ছাত্রীর আত্মহনন

জোর করে তোলা আপত্তিকর ভিডিওচিত্র মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ ও ঘৃণায় আত্মহত্যা করেছেন স্নাতক (সম্মান) পড়ুয়া এক গৃহবধূ।
গত সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশ বরিশাল নগরের কলেজ রো লেচুশাহ সড়কের বাসা থেকে গলায় কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ ভিডিওচিত্র ধারণকারী নজরুল ইসলাম ও তাঁর খালাতো ভাই আবদুর রাজ্জাককে আটক করেছে।
আত্মহনন করা সুপর্ণা বালা (২২) বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের গণিত বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার লক্ষ্মীখালী গ্রামে। একই উপজেলার পুইজালা গ্রামের কামনা আশীষ মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আশীষ একই কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর বর্ষের ছাত্র। টিউশনি করে সংসার চালাতেন তিনি।
কামনা আশীষ মণ্ডল জানান, প্রেম করে তাঁরা ২০০৪ সালে বিয়ে করেন। কিন্তু উভয় পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। তাই বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে শহরের কলেজ রো লেচুশাহ সড়কের প্রথম গলির খান মঞ্জিলের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন এবং স্ত্রীকে বিএম কলেজের গণিত বিভাগে ভর্তি করে দেন। সেখানে তাঁকে সব সময় উত্ত্যক্ত করতেন সহপাঠী নজরুল। একসময় নজরুল সুপর্ণার সরলতার সুযোগ নিয়ে তাঁর আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ধারণ করেন এবং তা বিভিন্ন মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেন। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ায় লজ্জায়-ক্ষোভে-দুঃখে সুপর্ণা সোমবার রাতে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ সুপর্ণার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
নজরুল গতকাল বিএম কলেজে পরীক্ষা দিতে এলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ভিডিওচিত্র ধারণের কথা স্বীকার করে নজরুল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, সুপর্ণার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সুযোগে ২০০৯ সালে নগরের প্লানেট ওয়ার্ল্ড শিশুপার্কে ওই ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়। এত দিন তা তাঁর মুঠোফোনের সেটে ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে এক সহপাঠীর বাসায় বেড়াতে গেলে ওই সহপাঠী তাঁর মুঠোফোন থেকে ভিডিওচিত্র নিয়ে কলেজে ছড়িয়ে দেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপত্তিকর ভিডিওচিত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে, সুপর্ণার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই ভিডিওচিত্র ধারণ করে নজরুল। পরে নজরুল ভিডিওচিত্র দিয়ে সুপর্ণাকে বিভিন্ন সময় হয়রানি করে। ১০-১২ দিন আগে ওই ভিডিওচিত্র মুঠোফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে লজ্জায়-ক্ষোভে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করতে পারে।’
ওসি জানান, ঘটনা জানার পর ভিডিওচিত্র ধারণকারী নজরুলকে আটক করা হয়। আটক করা হয় তাঁর খালাতো ভাই আবদুর রাজ্জাককেও।
গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানায়, সুপর্ণার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে অশ্লীল ভিডিওচিত্র ধারণ ও আত্মহননের প্ররোচনার মামলা হবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons