রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

প্রেম প্রতারণা, ফেঁসে গেছেন যশোর কারাগারের ডেপুটি জেলার

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কলেজছাত্রীর সর্বস্ব লুট করে এখন ফেঁসে গেছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আকতার হোসেন। ওই তরুণীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী’র মতো সম্পর্ক গড়ে এখন অস্বীকার করছে। এ অবস্থায় তরুণীটি এ প্রতারণার বিচার চেয়ে কারাকর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করে এবং তার সঙ্গে আকতারের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি জমা দিয়েছে। আবেদনে মেয়েটির দাবি- এ প্রতারণার সুষ্ঠু বিচার না হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া তার বিকল্প নেই। এদিকে মেয়েটির আত্মহত্যার হুমকি এবং বিচারের আবেদন ও তার সঙ্গে যুক্ত করা কিছু ছবি নিয়ে বিপাকে পড়েছে কারাকর্তৃপক্ষ। ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় গোটা কারাপাড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে যশোর কারাকর্তৃপক্ষ ডেপুটি জেলার আকতার হোসেনকে শোকজ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আকতার হোসেনের সঙ্গে প্রায় ৮ মাস আগে পরিচয় হয় কারাগারেরই আরেক কর্মচারীর কলেজপড়ুয়া কন্যার। অল্পদিনেই অনিন্দ্য সুন্দর মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন আকতার। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। আকতার মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সর্বনাশ শুরু করে। বিয়ের কথা বলে আকতার মেয়েটির সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। দিনে দিনে তাদের ঘনিষ্ঠতা সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। যা নিয়ে কারা চত্বরে নানা রকম রসাত্মক আলাপ-আলোচনার জন্ম হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ‘হবু জামাই’ জেলার আকতারের পরামর্শে ৩ মাস আগে তরুণীর পিতা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বদলি হয়ে স্বেচ্ছায় যান রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। আকতার ছুটি নিয়ে মাঝে মধ্যে রাজশাহী যেতেন এবং ওই তরুণীর বাসায়ও থাকতেন। আর বিয়ের প্রস্তুতির কথা বলে সময় ক্ষেপণ করতেন। পাঁচদিন আগে জরুরি কাজে নিজ বাড়ি যাওয়ার নামে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আকতার রাজশাহী যান। এবারও রাজশাহীতে গিয়ে আকতার তার প্রেমিকার বাসায় উঠেছিলেন। এ সময় মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মেয়ের পিতা-মাতা আকতারকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এরপরই প্রকাশ পায় আকতারের আসল রূপ। তিনি সরাসরি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। জানিয়ে দেন- ‘যা হয়েছে তা দু’জনের সম্মতিতেই হয়েছে। যে মেয়ে বিয়ের আগে তার প্রেমিককে সর্বস্ব উজাড় করে দিতে পারে, নিজ বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করে তাকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।’
আকতারের এ প্রত্যাখ্যানে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তরুণীর। সে ছুটে আসে যশোরে। লিখিত নালিশ জানায় কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। কর্মকর্তারা ডেপুটি জেলার আকতারকে ডেকে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি সবকিছু অস্বীকার করেন। নিরুপায় তরুণী এ পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। ফলে বিপাকে পড়ে কারাগার কর্তৃপক্ষ। গত দু’দিন ধরে তরুণী ও তার অভিভাবকরা যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মচারীর বাসায় অবস্থান করছেন। অন্যদিকে, কারাগার কর্তৃপক্ষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ডেপুটি জেলার আকতারের পিতা-মাতাও এসেছেন যশোর। তারাও ছেলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছেন, ওই মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে তারা মেনে নেবেন না।
আকতারের এ প্রতারণার কাহিনী এখন শুধু কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে শহরে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গোয়েন্দা, সাংবাদিকসহ বহু মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কারাগারে।
তরুণীর মা সাংবাদিকদের বলেন, আকতারের সঙ্গে তার মেয়ের দীর্ঘদিনের প্রেম সম্পর্ক। সে তার মেয়েকে বিয়ে করবে বলে রাত-বিরাতে বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় দু’জনে ছবি তুলেছে। কিন্তু যখনই বিয়ের কথা বলা হয়েছে তখনই সে ‘একটু সময় দিন’ বলে কালক্ষেপণ করেছেন। সমপ্রতি গত ৫ দিন আগে রাজশাহী গিয়ে তার বাসায় ওঠেন আকতার। তখন তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে ফাঁস হয়ে যায় তার আসল চেহারা। সে এখন আর তার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। তার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললেও তারা বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ডেপুটি জেলার আকতার হোসেন দাবি করেন, ‘আমাদের মধ্যে স্রেফ বন্ধুত্ব ছিল। এর বেশি কিছু না।’
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে যশোরে এসে অফিসে যোগদান করেছি। এরপর আকতারের সঙ্গে ওই মেয়ের প্রেমের বিষয়টি অবহিত হয়েছি।’ তিনি দাবি করেন, বিষয়টি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত। এখানে কারা প্রশাসনের করার কিছুই নেই। তবে উভয় পরিবারের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান আশা করেন তিনি।
আকতার বিয়ে করতে রাজি না হলে তরুণী আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে- এমন কথা শুনেছেন কিনা জানতে চাইলে জেলর মাসুদ পারভেজ বলেন, যদি উভয়পক্ষ কোন যৌক্তিক সমঝোতায় আসতে না পারেন এবং মেয়েপক্ষ লিখিত কোন অভিযোগ দায়ের করেন তবে তারা এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এদিকে মেয়েটির লিখিত আবেদন ও বিশেষ ঘনিষ্ঠতার মুহূর্তের কিছু ছবি হাতে পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আকতারকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নোটিসে বলা হয়েছে, তার এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে কারা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিব্রত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে আশু সুস্থ সমাধানে উপনীত হতে না পারলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সুপার সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিসটি বৃহস্পতিবার ডেপুটি জেলার আকতারের হাতে দেয়া হয়। আগামী দু’দিনের মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। জেলার জানান, বিষয়টি জানানো হয়েছে কারা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আইজিকেও। আইজি (প্রিজন্স) জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ডেপুটি জেলার নোটিসের জবাব দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিবদমান যে কোন পক্ষ ইচ্ছা করলে আইনের আশ্রয় নিতে পারে।
এদিকে, প্রতারণার শিকার তরুণী গতকাল যশোর ছেড়েছেন। যাওয়ার আগে তিনি যশোরের জেলা প্রশাসককে প্রতারণার কাহিনী লিখিতভাবে জানিয়ে গেছেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলারও বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। এদিকে কারা অভ্যন্তরে বসবাসকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons