শনিবার, ২৫ জুন, ২০১১

সাত মিনিটে এক হাজার ভরি স্বর্ণালংকার লুট


আলামত সংগ্রহ করছেন সিআইডির এক সদস্য
ছবি: প্রথম আলো
দোকান খুলতে না খুলতেই ডাকাত ঢুকে পড়ে। পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যেই তারা লুট করে নিয়ে যায় প্রায় এক হাজার ভরি স্বর্ণালংকার। কোনো সাড়াশব্দ নেই, আশপাশে কেউ কোনো কিছু টেরও পায়নি। 
গতকাল শুক্রবার ভরদুপুরে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর ইকবাল সেন্টারের নিউ হীরা জুয়েলার্স থেকে অস্ত্রের মুখে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার স্বর্ণালংকার লুট করেছে একদল ডাকাত। দোকানমালিকের মেয়ে নুসরাত সুলতানা এভাবেই ঘটনার বিবরণ দেন।
মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে রাজধানীতে দিনদুপুরে ডাকাতির এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে গত রোববার দুপুরে বাংলামোটরের ইস্টার্ন টাওয়ারে ব্যবসায়ী ইকরামুল কদরের ফ্ল্যাটে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে সোয়া কোটি টাকার মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতেরা। এরপর ডাকাতের খোঁজে পুলিশ পুরো কমপ্লেক্সের দেড় শ ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
গুলশান থানার পুলিশ জানায়, ইকবাল সেন্টারে ডাকাতির ঘটনায় দোকানের চার কর্মী ও ভবনের তিন নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পর গুলশান থানার পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।
যেভাবে ডাকাতি: দোকানমালিকের মেয়ে নুসরাত প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের জন্য বিক্রয়কেন্দ্রটি কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ ছিল। দুপুর একটা ৫৬ মিনিটে কর্মচারী শামীম তাঁকে ফোন করে বলেন, ‘আপা, দোকান খুললাম।’ এর ১৪ মিনিট পর দুপুর দুইটা ১০ মিনিটে শামীম আবার ফোন করে বলেন, ‘আপা, সব ডাকাতি হয়ে গেছে।’
ডাকাতির বর্ণনা দিয়ে নুসরাত সুলতানা বলেন, ঘটনার সময় দোকানে চারজন ছিলেন। তাঁরা হলেন বিক্রয়কর্মী শামীম, বাচ্চু, রাশেদ ও কাজের ছেলে ইমরান। বিক্রয়কর্মীদের ভাষ্যমতে, পাঁচ-ছয়জন যুবক দোকানে ঢুকেই অস্ত্র বের করে। এদের একজনের হাতে ছিল একটি পিস্তল বা রিভলবারজাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র। অন্যদের হাতে ধারালো দা ও চাপাতি। দোকানে ঢুকেই তারা আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে কর্মীদের দোকানের পশ্চিম কোণে জড়ো করে। এরপর চাপাতি দিয়ে দোকানের সামনের একটি শোকেস ও দেয়ালে লাগানো একটি শোকেসের কাচ ভেঙে ফেলে। ওই সব শোকেসভর্তি চুড়ি, চেইন, আংটিসহ বিভিন্ন অলংকার সাজানো ছিল। কিন্তু তারা বেছে বেছে চুড়ি, আংটিসহ ভারী অলংকারগুলো নিয়ে গেছে। হালকা আংটির শোকেস ভাঙলেও তারা সেগুলো নেয়নি। সব মিলিয়ে দোকানের ভেতরে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ডাকাতেরা অবস্থান করে। 
ভবনের পাশেই টাইম জোনের একজন বিক্রয় কর্মকর্তা জানান, দুপুর সোয়া দুইটার দিকে দু-তিনজন যুবককে তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠতে দেখেছেন তিনি। এর পরই হীরা জুয়েলার্সের কর্মীরা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করেন। তবে দৌড়ে যাওয়া যুবকদের হাতে কোনো অস্ত্র বা ব্যাগ ছিল কি না, তা দেখতে পাননি ওই কর্মকর্তা। টাইম জোনের আরেক পাশের বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তাও এমনই বর্ণনা দিয়েছেন। তবে ঘটনার আগে কেউই কিছু বুঝতে পারেননি।
দোকানটির শোকেসসহ বিভিন্ন জায়গায় ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। কর্মচারীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ভাঙা কাচের ভেতর থেকে গয়না তোলার সময় এক ডাকাতের হাত কেটে যায়। সেখান থেকেই রক্ত গড়াচ্ছিল।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, দোকানের এক বিক্রয়কর্মীরও হাত-পা কাটা পাওয়া গেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ডাকাতির জন্য কর্মচারীদের দায়ী করে নুসরাত বলেন, ‘শামীম আমাকে বলেছে, সব নিয়ে গেছে, আবার সে বলেছে ডাকাতেরা চারটা সিএনজি অটোরিকশায় করে পালিয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, দোকানের ভেতরে বসে শামীম এত কিছু দেখল কীভাবে? তা ছাড়া ডাকাতেরা এসে দোকানের সব দিক বাদ দিয়ে শুধুই ভারী গয়নার ড্রয়ার ও শোকেস ভেঙে সেগুলো নিয়ে গেছে। তারা দোকান সম্পর্কে এসব তথ্য কী করে জানল?’
নিরাপত্তাব্যবস্থা: বনানীর ৪১ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে ১৯ তলা ভবন ইকবাল সেন্টার। ভবনটির উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে তিনটি প্রবেশমুখ রয়েছে। যতক্ষণ মার্কেট খোলা থাকে তিনটি প্রবেশমুখেই সার্বক্ষণিক একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকেন। ‘গ্রুপ ফোর সিকিউরিটিজে’র সদস্যরা ভবনের প্রবেশমুখ ছাড়াও বিভিন্ন তলায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
ভবনটির নিচতলায় কামাল আতাতুর্ক সড়কসংলগ্ন উত্তর দিকের ফটক দিয়ে ঢুকতেই সোজা হীরা জুয়েলার্সের অবস্থান। হীরা জুয়েলার্সের দুই পাশে ঘড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠান ‘টাইম জোনে’র দুটি বিক্রয়কেন্দ্র। পাশ দিয়ে গলি চলে গেছে ভবনের ভেতরে।
ভবনের উত্তর পাশের প্রবেশমুখেই সিসি ক্যামেরা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর হীরা জুয়েলার্সের ভেতরে তিনটি সিসি ক্যামেরা দেখা গেলেও তিনটিই ছিল নষ্ট।
সিসি ক্যামেরা নষ্ট হওয়ার প্রসঙ্গে নুসরাত বলেন, ‘ওগুলো আগে থেকেই নষ্ট ছিল।’
ডাকাতি হওয়া হীরা জুয়েলার্সের মালিক আলী আকবর খান। বায়তুল মোকাররম মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। তবে বনানীর বিক্রয়কেন্দ্রটির দেখাশোনা করেন মেয়ে নুসরাত সুলতানা। 
নুসরাতের দাবি, ডাকাতেরা প্রায় এক হাজার ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে। এক হাজার ভরি স্বর্ণালংকারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।


প্রথম আলো

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons