বুধবার, ২৯ জুন, ২০১১

শতাধিক লোকের সামনে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা


প্রথমে যুবকটির হাত-পা বাঁধা হলো। তাঁকে ঝোলানো হলো বটগাছে। তারপর সাত-আটজন মিলে বেদম লাঠিপেটা করতে লাগল। ঘটনাটি ঘটে শতাধিক লোকের সামনেই।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এভাবে লাঠিপেটায় প্রাণ দেন কবির গাজী (৩০) নামের ওই যুবক। ঘটনাটি ঘটে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি মুঠোফোন চুরি করেছেন। কিন্তু ওই মুঠোফোন পরে অভিযোগকারীর বাড়িতেই বন্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
কবিরের বাড়ি কলাগাছিয়ার কল্যাণকলস গ্রামে। গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে, কবির গাজী সরল প্রকৃতির ছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাউল গান শোনাতেন। মুঠোফোন চুরির মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামের সাবেক পুলিশ সদস্য মো. রুহুল আমিন গাজীর বাড়িতে যান কবির গাজী। ওই দিন রাত থেকে মুঠোফোন খুঁজে পাচ্ছিলেন না রুহুল। এটি কবির চুরি করেছেন বলে তাঁর সন্দেহ হয়।
গ্রামবাসী জানায়, গতকাল সকালে লোকজন নিয়ে রুহুল কল্যাণকলস গ্রামে যান এবং বাড়ি থেকে কবিরকে ধরে নিয়ে আসেন। সকাল সাতটার দিকে কবিরের হাত-পা বেঁধে রুহুলের বাড়ির সামনের একটি বটগাছের ডালে ঝোলানো হয়। শুরু হয় বেদম লাঠিপেটা। একপর্যায়ে কবির মারা যান। পরে রুহুলের ঘরে বন্ধ অবস্থায় মুঠোফোনটি পাওয়া যায়। রুহুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যান।
গ্রামবাসী অনেকেই জানান, কবির গাজী মুখে মুখে কবিতা বানাতেন। এ ছাড়া তিনি পশুপাখির ডাক নকল করতে পারতেন। এ কারণে এলাকায় তিনি ‘হরবোলা কবির’ নামেও পরিচিত ছিলেন। গান, কবিতা ও পশুপাখির ডাক শুনিয়ে লোকজনের কাছ থেকে যা পেতেন, তা দিয়েই তিনি সংসার চালাতেন। কবির গাজীর স্ত্রী নূর নাহার বেগম (২৪) বলেন, ‘আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
গলাচিপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, কবিরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মো. হাসান মুন্সী (৩৩), রুহুল আমিনের আপন ভাগনে কামাল হোসেন (৩২) ও শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মো. আনোয়ার কবিরকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শাহ আলম বলেন, গাছে ঝুলিয়ে কবির গাজীকে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন কামাল। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং পুলিশের সাবেক সদস্য রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons