রবিবার, ২৬ জুন, ২০১১

কোলে শিশু, গায়ে মাদক

কাজে যাওয়ার আগে শিশুটিকে পেট ভরে খাওয়ানো হয় না। ধরা পড়লে ঘন ঘন চিমটি দিতে হয় কোলের শিশুটির গায়ে। এতে শিশুটি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। সে সময় এক ধরনের সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি হয়। তখন পুলিশকে বলি, খাবারের অভাবে কোলের বাচ্চাটা অভুক্ত। এগুলো নিতে পারলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে। তা দিয়ে দুধ কেনা হবে। তখন উপস্থিত সবার মন একটু নরম হয়।’
মাদক পাচারের কৌশল সম্পর্কে এভাবেই বললেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার এক নারী মাদক বহনকারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ও ভাইবোনের বাচ্চাদের নেওয়া হয়। এ জন্য দিনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা গুনতে হয়। আর শিশুটির সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠতে তাঁদের পূর্বপ্রস্তুতিও থাকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব সার্কেলের পরিদর্শক তমিজ উদ্দিন মৃধা জানান, ব্যক্তি, প্রশাসন ও বিচারকদের কাছ থেকে সহানুভূতি আদায় করতে নারী মাদক বহনকারীরা শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজে ব্যবহার করছে। জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়েন তানহিয়া বেগম। কোলের শিশুটি তাঁর ছিল না। ভাড়ায় এনেছিলেন।
মাদক ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝুঁকি এড়াতে অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে এ পেশায় অতি কৌশলী হতে হয়। কিছুদিন পর পর বদলাতে হয় সেই কৌশল। তবে পুরুষের চেয়ে নারীরা এ পেশায় বেশ যোগ্য ও নিরাপদ। 
মাদক ব্যবসায়ীরা জানান, ভৈরব রেলওয়ে থানার ভৈরব থেকে ঢাকার টঙ্গী এবং কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে। অপর দিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভৈরব সার্কেল থেকে নিয়ন্ত্রণ হয় কিশোরগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলা। র‌্যাব-৯ ভৈরব ক্যাম্পের অধীনে আছে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। ভৈরব মূল থানাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠানে নারী সদস্য নেই। এই সুযোগটি নেন নারী মাদক বহনকারীরা। তাঁরা গায়ে মাদকদ্রব্য পেঁচিয়ে বহন করেন। ফলে পুলিশের পুরুষ সদস্যের পক্ষে দেহ তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। 
ভাড়ায় শিশু নিয়ে মাদক বহন করেন ভৈরবের পঞ্চবটির এমন একজন নারী মাদক বহনকারী বলেন, ‘কাঁঠাল, কুমড়া, গাড়ির চাকা, স্যালাইনের প্যাকেট, সাপ রাখার বাক্স এমনকি গরম ভাতের পাত্রে করে মাদক পাচারের কৌশল পুলিশ জেনে গেছে। কী কারণে কোলে শিশু রাখা হয়, তা-ও পুলিশের জানা। এর পরও শিশু কোলে থাকলে কিছু সুবিধা পাওয়া যাবেই। পুলিশের কাছ থেকে মাফ না মিললে আদালতে গিয়ে পাওয়া যায়।’
বেসরকারি সংস্থা সাদ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সাগর রহমান প্রথম আলোকে জানান, যেসব নারী কোলে নিজের বা ভাড়ায় নিয়ে মাদক বহন করেন, তাঁরা কিন্তু ব্যবসায়ী নয়, বহনকারী। গডফাদারদের দ্বারা পরিস্থিতির শিকার। ভৈরবের নামীদামি অনেক ব্যক্তি এই খাতে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ওই গডফাদারদের বিরুদ্ধে পুলিশের একার পক্ষে সফল হওয়া কঠিন। 
সমস্যা সমাধানের কিছু প্রস্তাব পাওয়া গেল ভৈরব রেলওয়ে পুলিশের কাছ থেকে। তারা জানায়, ‘বাল্লা লোকাল’ নামে ভৈরব-আখাউড়ার মধ্যে চলাচলকারী ট্রেনে করে নারীরা মাদক বহন করে থাকেন বেশি। সে কারণে স্থানীয়ভাবে ট্রেনটি ‘মাদক ট্রেন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ট্রেনে নারী পুলিশ সদস্য রাখা, ওঠা ও নামার সময় সন্দেহভাজন যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করা, কামরায় আলোর ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ভৈরবের নারী মাদক ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ফেলা যায়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons