বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও জ্যেষ্ঠতা পেলেন ১৯৭ জন চিকিৎসক

দশম বিসিএসের ১৯৭ জন চিকিৎসক কর্মকর্তা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না নিয়ে এবং জ্যেষ্ঠতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও জ্যেষ্ঠতা পেয়েছেন, অথচ বাদ পড়েছেন বিভিন্ন সময় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া তাঁদের তিন শতাধিক সহকর্মী।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে সরকারি সূত্রগুলো। আর বঞ্চিত ব্যক্তিরা বলছেন, নানা নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ স্বাস্থ্য খাতে সরকার নতুন করে বৈষম্য ও অসংগতি সৃষ্টি করল। তাঁরা আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৭ অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে স্থায়ী হতে হলে চার মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস করতে হবে। জ্যেষ্ঠতা পেতে হলে চাকরিতে যোগ দেওয়ার ১৪ বছরের মধ্যে সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতেই হবে।
কিন্তু ওই ১৯৭ চিকিৎসক কর্মকর্তা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ নেননি, জ্যেষ্ঠতার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হননি। একই সময়ে নিয়োগ পাওয়া ২৪৭ জন জ্যেষ্ঠতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য খাতে চলমান নানা সমস্যাকে আরও প্রকট করবে। বঞ্চিত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক, যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়বে রোগীদের ওপর। একজন চিকিৎসক তখনই কাজের স্পৃহা পাবেন, যখন তাঁর প্রতি ন্যায্য আচরণ করা হবে।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) আশরাফুল ইসলাম বলেন, জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। স্বাস্থ্য ক্যাডারে জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার যে বিধান, তা পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়মের কারণে বহু বছর আগে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকেরা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের বাইরে থেকে গেছেন। নির্বাহী আদেশে তাঁরা সব শর্ত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৯৪ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত সরকারি গেজেটে ১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর বা তার আগে চাকরিতে যোগ দেওয়া চিকিৎসকদের বিভাগীয় পরীক্ষা ও বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা পাওয়া ১৯৭ জন চিকিৎসক চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, অনিয়ম দূর করতে গিয়ে মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির আদেশের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। হরেদরে অব্যাহতি দিলে নতুন করে আইনগত জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে যেকোনো সময় সেই আদেশ বাতিলও করা হতে পারে।
সূত্রগুলো জানায়, গত ৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই ১৯৭ জনের জ্যেষ্ঠতা প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যে চিঠি পাঠিয়েছে, তাতে দুই ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে। উপসচিব মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ৫ ডিসেম্বর ১৯৯১ বা তার আগে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের জ্যেষ্ঠতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ওই একই চিঠিতে বিশেষ বিসিএসের একজন, চতুর্থ বিসিএসের দুজন, সপ্তম বিসিএসের ২৭ জন, অষ্টম বিসিএসের ৫০৬ জন, নবম বিসিএসের ২০৭ জন, দশম বিসিএসের ১৯৭ জন এবং একাদশ বিসিএসের একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এর কারণ হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারাও জ্যেষ্ঠতা পেয়েছেন। কিন্তু প্রথম থেকে একাদশ বিসিএস পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন। জ্যেষ্ঠতা না পাওয়ায় তাঁরা হতাশ। তাঁদের কাজের গতিশীলতা আনাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দশম বিসিএসের ওই কর্মকর্তারা ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দিলেও, নথিপত্রে ওই বছরের ২২ এপ্রিল তাঁদের যোগদানের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২২ এপ্রিল সরকারি কর্মকমিশন তাঁদের চাকরির সুপারিশ করেছিল।
সূত্রগুলো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্যগত ওই অসংগতি সম্পর্কে জানে। বহু বছর ধরে স্থগিত থাকার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার চিকিৎসকদের পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তাতে বলা হয়, ১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বরের পর চাকরিতে যোগ দেওয়া চিকিৎসকদের বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ও সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যক। বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। বিভাগীয় পদোন্নতির জন্য এই তথ্য আবশ্যক।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েতউল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বহুদিন ধরে যে বিশৃঙ্খলা চলে এসেছে, তা দূর করে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons