বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১

ভুয়া দলিল দিয়ে অর্থ লোপাট

ভুয়া জাহাজীকরণ দলিল দিয়ে জনতা ব্যাংকের দুবাই শাখা থেকে অভিনব কায়দায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। মেসার্স স্টিভেন ফ্রস্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ কর্মকাণ্ড হয়েছে।
স্টিভেন ফ্রস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হচ্ছেন জনৈক নাজমুল হক। চেক জালিয়াতির এক মামলায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) পুলিশ নাজমুল হককে খুঁজছে। নাজমুল হক পালিয়ে দেশে এসে একই ব্যবসার নতুন ফন্দি আঁটছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল এসব তথ্য-উপাত্ত জনতা ব্যাংককে দিয়েছে। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম আমিনুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রথম আলোকে জানান, এই অনিয়মের খেসারত হিসেবে ব্যাংককে দু-একটি এলসির অর্থ ইতিমধ্যেই পরিশোধ করতে হয়েছে।
জাতিসংঘের কিছু বিধিনিষেধ থাকায় ইরান থেকে বাংলাদেশে সরাসরি পণ্য আমদানি করা যায় না। স্টিভেন ফ্রস্ট দুবাই থেকে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়। এ জন্য জনতা ব্যাংকের দুবাই শাখায় ঋণপত্র বা এলসি খুলে পণ্য এনে তারপর তা পাঠায় চট্টগ্রাম বন্দরে। এই আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার মধ্যেই ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্টিভেন ফ্রস্ট ইরান থেকে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। রপ্তানিকারক পণ্য পাঠিয়ে জাহাজীকরণ দলিল দিয়েছে জনতা ব্যাংক দুবাই শাখাকে। ব্যাংকের দুবাই শাখা স্টিভেন ফ্রস্টের অনুমোদন নিয়ে ইরানের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে স্বীকৃতিপত্র (এক্সসেপটেন্স) পাঠিয়ে দিয়েছে। আবার আমদানির মূল্য না নিয়েই স্টিভেন ফ্রস্টকে জাহাজীকরণ দলিল দিয়ে দিয়েছে। স্টিভেন ফ্রস্ট তা চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়ায় পণ্য খালাসও হয়ে গেছে। এতে ব্যাংককে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে।
অন্য এলসির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নিয়ম অনুসারে স্বীকৃতিপত্র পাওয়ার তিন মাস পর ইরানের ব্যাংক অর্থ পরিশোধের জন্য জনতা ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। জনতা ব্যাংক কোম্পানিটির কাছে টাকা চাইলে ত্রুটিপূর্ণ দলিল উল্লেখ করে অর্থ পরিশোধ করেনি। ইরানের ব্যাংক দলিলটি ফেরত চাইলে স্টিভেন ফ্রস্ট কোম্পানি জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া দলিল তৈরি করে সেটি পাঠিয়ে দেয়। ভুয়া দলিলের বিষয়টি ইরানের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইরানের কাছে অভিযোগ করে। সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইরান অভিযোগটি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে এ নিয়ে তদন্ত করা হয়।
ভুয়া জাহাজীকরণ দলিলের বিপরীতে এখন পর্যন্ত পাঁচ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে ব্যাংককে। তবে টাকার পরিমাণ অনেক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুবাই শাখায় স্টিভেন ফ্রস্টের নামে কোনো হিসাব খোলার আগেই অন্য কোম্পানির চলতি হিসাব ব্যবহার করে এলসি খোলা হয়, যা গুরুতর অনিয়ম। এসব এলসি খুলতে ব্যাংকটির ইউএই কার্যক্রমের প্রধান নির্বাহী শফিকুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশনা ছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানতে পেরেছে। কিন্তু এ নির্দেশনা দেওয়ার বিধিগত ক্ষমতা তাঁর নেই।
এদিকে নাজমুল হক দুবাই থেকে পালিয়ে দেশে এসে মতিঝিলে জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নিচতলায় অবস্থিত ভবন শাখা থেকে ব্যাংকিং লেনদেন চালানোর উদ্যোগ নেন। এখানে স্টিভেন ফ্রস্ট বিডি নামে সহযোগী প্রতিষ্ঠান খুলে দুবাইয়ের কোম্পানির সমস্ত লেনদেন স্থানান্তরের চেষ্টা চালান নাজমুল। তবে ভবন শাখা তাতে সায় দেয়নি বলে জানা গেছে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons