শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১১

মংলা যৌন পল্লীতে সন্ত্রাসীদের রাজত্ব কায়েম, জিম্মি হয়ে পড়েছে বাসিন্দারা

মংলা যৌন পল্লীরোমান শেখ, বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ মংলা বন্দর কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বাণীশান্তা যৌন পল্লীতে চরম অরাজকতা চলছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ওই পল্লীর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে নিরীহ যৌনকর্মী, দোকানদার ও পল্লীর বাসিন্দাদের উপর নানা হুমকি ধামকি প্রদর্শনসহ নির্যাতন চালাচ্ছে।
যৌনকর্মীদের সংগঠন নারী জাগরনী সংঘ সন্ত্রাসীদের তান্ডবের প্রতিবাদ করায় এর নেত্রী ও সদস্যদের নানাভাবে হয়রানীসহ জীবন নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় ওই সংগঠনের নেত্রী ও সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। এ ছাড়া প্রভাবশালী মহলটির সন্ত্রাসী বাহিনীর দৌর্ত্যের কারণে যৌনপল্লীর বাসিন্দারা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
ভূক্তভোগী যৌনকর্মীদের মংলা প্রেস ক্লাবে দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার একদল সাংবাদিক সরেজমিনে পশুর নদীর পশ্চিম পাড়ের বানীশান্তা যৌন পল্লীতে গেলে সেখানকার যৌনকর্মী ও বাসিন্দারা সাংবাদিকদের কাছে তাদের উপর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নানা কাহিনী তুলে ধরেন। যৌনকর্মী শিউলি বেগম জানান, সমপ্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে বানীশান্তা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য (মেম্বর) পদে পরাজিত এক প্রার্থীর ক্যাডার বাহিনী যৌন পল্লীর নিয়ন্ত্রন ও আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্র ছায়ায় ওই পরাজিত প্রার্থীর ক্যাডার বাহিনী নিরীহ যৌনকর্মীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে যৌনকর্মীদের মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে পল্লী থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এ ছাড়া ক্যাডার বাহিনীর লোকজন যৌনকর্মীদের দেহ ভোগ করে টাকা না দেয়া, জোর করে ঘরে ঢুকে মদ পান করে আড্ডা দেয়াসহ নানা অজুহাতে হয়রানী করে থাকে। যৌনকর্মীদের সংগঠন ” নারী জাগরনী
সংঘ” সমপ্রতি সন্ত্রাসীদের এসব অত্যাচারের প্রতিবাদ করলে এর নেত্রী ও সদস্যদের নানাভাবে হয়রানী করাসহ হুমকি ধামকি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
সংগঠনের সাধারণ সমপাদিকা রাজিয়া সুলতানা জানান, অত্যাচার ও নির্যাতনের খবর সাংবাদিকদের জানানোর কারণে তিনি এখন সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাকে নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তিনি জান মালের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। তিনি আরো বলেন, বন্দর কেন্দ্রীক গড়ে ওঠা এ পতিতা পল্লিতে বিদেশী জাহাজের নাবিকেরা আসলে প্রভাবশালী এই বাহিনীর সদস্যদের হাতে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। সংগঠনের সহ সভানেত্রী সাহিদা বেগম জানান, সন্ত্রাসীদের তান্ডবের প্রতিবাদ করলে পরিকল্পিতভাবে মাদক বিক্রী ও ভূয়া অভিযোগ দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করা হয়। পল্লীর দোকানদার মজিবর রহমান জানান, পল্লীর নিয়ন্ত্রন নিজেদের দখলে নিতে সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেক সময় তারা পুলিশকে জানানোর সাহস পান না।
এমনও নজির রয়েছে, এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিতে গেলে প্রভাবশালীরা মিথ্যা মামলা দেয়াসহ প্রশাসন দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করে থাকে। পল্লীর বাড়ি ওয়ালী আমেনা বেগম জানান, নতুন কোন মেয়ে আসলেই ক্যাডার
বাহিনীর লোকজন মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে থাকে। চাঁদা দিতে অপারগ হলে তাকে পল্লী ছেড়ে দেবার নির্দেশসহ বাড়ি ওয়ালীদের হুমকি ও হয়রানী করা হয়। এ বিষয়ে নব নির্বাচিত ইউপি মেম্বর হালিম হাওলাদার বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ওই যৌন পল্লিতে নানা ধরণের সন্ত্রাসী ও বেআইনি কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
যৌনকর্মীরা যাতে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে আমতলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এ এস আই বাহারুল ইসলাম বলেন, এখনও পর্যন্ত কেউই কোন অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া কেউকেই এই পতিতা পল্লিতে বিশৃংখলা সৃষ্টির সুযোগ দেয়া হবে না।
bnb news

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons