শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০১১

সস্তা দামের সালফার ও মাটি মিশিয়ে দস্তা সার বিক্রি

চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থানে ভেজাল ও নিম্নমানের দস্তা সার অবাধে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির চকচকে প্যাকেটে সস্তা দামের সালফার ও মাটি ভরে দস্তা সার হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রেজাউল করিম জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র শুধু দস্তা সারের নামেই ভেজাল দ্রব্য বিক্রি করে জেলা থেকে প্রতিবছর ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক কৃষক না বুঝে এসব নিম্নমানের সার জমিতে ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই সার ব্যবহারের কারণে কৃষকেরা বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লোকসান গুনছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই দুই ও তিন ফসলি। এসব জমিতে উন্নত ফলনের আশায় কৃষকেরা প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ দস্তা সার ব্যবহার করছেন। ৪২টি দস্তা সার কোম্পানি স্থানীয় ৮১ পাইকারি, ৯১০ জন খুচরা সার ও কীটনাশকের ডিলারসহ বিভিন্ন মুদি দোকানের মাধ্যমে এসব সার বিক্রি করছে। যশোরের নওয়াপাড়া, ঢাকা ও স্থানীয় বেশ কিছু কোম্পানি এ সার তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত।
বাজার থেকে দস্তা সার কিনে ব্যবহারের পর আশানুরূপ ফসল উৎপাদন না হওয়ায় কৃষকেরা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মে মাসে বাজার থেকে দস্তা সারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনার মৃত্তিকাসম্পদ ইনস্টিটিউটে পাঠায়। সেখানে পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গায় এসে পৌঁছায়।
প্রাপ্ত ফলাফলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মান অনুযায়ী মনোহাইড্রেট-জাতীয়তে সর্বনিম্ন ৩৬ শতাংশ, হেপ্টাজাতীয়তে ২১ শতাংশ ও চিলেটেড-জাতীয় দস্তা সারে ১৭ শতাংশ জিংক থাকার কথা। অথচ পরীক্ষাগারের ৪৪টি সারের মধ্যে মাত্র নয়টিতে এ মানের কাছাকাছি জিংক পাওয়া গেছে। চিলেটেড-জাতীয় দস্তা সারের মধ্যে এআরজেড কোম্পানির ‘জিংক’-এ কোনো জিংক পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া মনোহাইড্রেট-জাতীয় দস্তা সারের মধ্যে জিংকটক্সে দশমিক ৪, যমুনা জিংক প্লাসে ৪, সিনো জিংকে ৪ দশমিক ৪, আর কে তাজায় ১০ দশমিক ৪, প্রাইম জিংকে ১২ দশমিক ৬, ক্রাউন মনো সুপার জিংকে ১৪ দশমিক ৮, ফিউচার জিংকে ১৫ দশমিক ৩ এবং হেপ্টাজাতীয় দস্তা সারের মধ্যে সুফলন জিংকে মাত্র দশমিক ৩ শতাংশ দস্তার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গত বছর চুয়াডাঙ্গায় ভেজাল সারের একটি কারখানার সন্ধান মেলে, যেখান থেকে সারের উপকরণ হিসেবে কালো মাটি, ইটের গুঁড়া ও সালফার পাওয়া যায়।
সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শরীফ উদ্দীন জানান, জমিতে দস্তার প্রয়োজন আছে কি না, তা না জেনেই কৃষকেরা বিক্রেতা ও কোম্পানির লোকের মিষ্টি কথায় সার ব্যবহার করে চলেছেন। এতে জমির উপকারের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে বেশি।’
চুয়াডাঙ্গা শহরে দস্তা সারের পাইকারি বিক্রেতা তসলিম আরিফ জানান, কোনো সার নিম্নমানের প্রমাণিত হলে সেগুলো কোম্পানিকে জানানো হবে। কোম্পানি ব্যবস্থা না নিলে নিম্নমানের সার বিক্রি করা হবে না। সেলিম ট্রেডার্সের মালিক এম এম সেলিম জানান, তাঁরা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির দস্তা সার বিক্রি করেন। মান নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রেজাউল করিম জানান, পরীক্ষায় প্রমাণিত নিম্নমানের সার বিপণন বন্ধ করতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons