রাজশাহীর বাগমারায় নীতিমালা লঙ্ঘন করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের ১৯ লাখ টাকার সম্পদ বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমিহীনদের গাছের চারা এবং বিত্তশালীদের গরু ও ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) বাগমারা উপজেলার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাগমারার বাসুপাড়া, বড়বিহানালী, আউচপাড়া ও মাড়িয়া ইউনিয়নকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের চারটি গ্রাম নির্বাচন করে প্রতিটি গ্রামের ৬০টি পরিবারকে চূড়ান্তভাবে সম্পদ বিতরণের জন্য নির্বাচিত করে গ্রাম সংগঠন কমিটি। এ জন্য তারা অতি দরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরি করে। অভিযোগ উঠেছে, এ তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। গ্রামের প্রভাবশালীরা কথিত গ্রাম সংগঠনের নেতা হয়ে তাঁরাই তালিকা তৈরি করেছেন। নয় সদস্যবিশিষ্ট এই গ্রাম সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা পেয়েছেন মূল্যবান সম্পদ। তাঁদেরই রাখা হয়েছে ‘অতি দরিদ্রের’ তালিকায়। অথচ যাঁদের জমিজমা নেই, তাঁদের রাখা হয়েছে এসব কথিত অতি দরিদ্রের ওপরের স্তরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রভাবশালী দরিদ্ররা পেয়েছেন মূল্যবান গাভী ও ঢেউটিন। আর প্রকৃত দরিদ্ররা পেয়েছেন গাছের চারা ও সবজির বীজ। আউচপাড়ার বিধবা খতেজান বেওয়া জানান, তাঁকে এক হাজার টাকা মূল্যের গাছের চারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর বাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জায়গা নেই। তিনি গাছের চারা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গরু চেয়েও তিনি পাননি। আউচপাড়া ইউনিয়নের খুজিপুর গ্রামের বিধবা রনেকা জানান, যাঁদের জায়গা নেই, তাঁদের গাছের চারা ও সবজির বীজ দেওয়া হয়েছে। আর যাঁরা গ্রাম কমিটির সদস্য ও যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে, তাঁদের দেওয়া হয়েছে গাভী, ঢেউটিন ও ২০ হাজার টাকার ক্ষুদ্রঋণ।
হাটখুজিপুর গ্রাম সংগঠনের সভাপতি রহিদুল ইসলাম নিজের নামে গরু নিয়েছেন। তাঁর ভাই সাদিকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী খাদিজাকে সদস্য করে তাঁদের নামেও গরু দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী ও সদস্য ছামান আলীও নিয়েছেন গরু।
এই সংগঠনের আশরাফ আলী, ছামান আলীসহ অন্যরা নিজেদের নামে গরু নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। তাঁরা জানান, পরবর্তী তালিকায় তাঁদের (গরিব ব্যক্তিদের) দেওয়া হবে।
বাসুপাড়ার আব্বাস আলী ও বড়বিহানালীর সাইদুর রহমান অভিযোগ করেন, তাঁদের এলাকায়ও প্রভাবশালীদের দামি সম্পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁদের সবজির বীজ ও চারা দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এম জিয়াউর রহমান জানান, তালিকা তৈরিতে ও সম্পদ বিতরণে অনিয়ম করা হয়েছে। তিনি প্রকল্পের সভাপতি হলেও এ ব্যাপারে তাঁর কোনো মতামতই নেওয়া হয়নি।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত বিআরডিবি কর্মকর্তা তাজ নাওয়াজউল কবির প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে তালিকা তৈরিতে কিছু অনিয়ম হয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য লোক নিয়োগ থাকলেও সেসব পদে কেউ না থাকায় অনিয়ম খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি।




১২:১৭ PM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন