মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১১

জন্মদিনের আনন্দ আয়োজন

জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভক্তরা পুষ্পবৃষ্টির মধ্য দিয়ে বরণ করে নেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে

জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভক্তরা পুষ্পবৃষ্টির মধ্য দিয়ে বরণ করে নেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে

ছবি: প্রথম আলো

শ্রাবণের আকাশে মেঘ ছিল না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নতুন নির্মিত মিলনায়তনটিতে আগত ব্যক্তিরা গরমে স্বেদসিক্ত। তা সত্ত্বেও তাঁদের আগ্রহ আর আনন্দের কমতি নেই। ফুল হাতে নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছেন, কখন প্রিয় মানুষটি আসবেন?
খোশগল্পে মশগুল তাঁরা। ফুল হাতে একজন বললেন, বিয়েবাড়ি বিয়েবাড়ি লাগছে। প্রিয় ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ যখন এলেন, তখন তো একজন বলেই ফেললেন, ‘স্যার আপনাকে জামাই জামাই লাগছে।’ স্যারও রসিকতার জবাব দিলেন সরস ভঙ্গিতেই। স্মিত হেসে বললেন, ‘ভালোই তো, একজন একটা কনে এনে দাও, আর একজন একটা রুমাল দাও মুখ ঢাকি।’ হাসির রোল পড়ে গেল মিলনায়তনে তাঁর কথায়।
বহুমুখী ব্যক্তিত্ব, আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগরখ্যাত আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৭২তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল সোমবার। তিনি ১৯৩৯ সালের ২৫ জুলাই কলকাতার পার্কসার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সন্ধ্যায় তাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর আয়োজন করে। শ্রদ্ধাভাজন এই শিক্ষকের সরস কথা, তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতা আর গানে গানে আনন্দঘন হয়ে উঠেছিল অনুষ্ঠান।
গত শতকের ষাটের দশকের নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলনের তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। ৩০ বছর মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকতা করে তিনি জীবন গড়েছেন বহু মানুষের। এর পরও থেমে যায়নি তাঁর কর্মোদ্যম। শুরু করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এ সংগঠনটির পথচলারও ২৮ বছর পেরিয়ে গেল। আর এ দীর্ঘ পথচলার মাঝেও তিনি লিখেছেন কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল ও জীবনীগ্রন্থ। এসব বহুমুখী কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে আপন আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানস্থলে তিনি এসে পৌঁছাতেই পুষ্পবৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয়। মঞ্চে শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘আলো আমার আলো’ গানটি। ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় রঙিন কাগজের টুপি। পরে কেক কেটে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন তিনি। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়েও সরস কথা দিয়ে মুগ্ধ করলেন শুভার্থীদের। কৌতুকের ছলে জানালেন, তাঁর বয়স এখন ৩৭। বললেন, ‘এর আগে ঘরোয়াভাবেই আমার জন্মদিন হয়েছে। জন্মদিনে বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা করতে ইচ্ছে করে না। খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতেই ভালো লাগে।’ তিনি বলেন, মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়। মানুষ নিজে যা ভাবতে পারে, মানুষ তা-ই। দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘আজি প্রণমি তোমারে’ সাজানো হয় গান, আবৃত্তি ও পাঠ দিয়ে। এতে আমন্ত্রিত অতিথিদের পাশাপাশি একক গান পরিবেশন করেন পাঠচক্রের আফরিন, রেওয়াজ, জুয়েল, সুরভীসহ আরও অনেকে। পরিবেশিত গানের মধ্যে ছিল ‘আমি তখন ছিলেম মগন’,‘ মন মোর মেঘের সঙ্গী’, ‘আকাশে আজ ছড়িয়ে’, ‘আমায় একটি ভাঙা কলম দাও’, লোকে বলে বলেরে ঘর বাড়ি’সহ আরও অনেক গান।
গানের মাঝে মাঝে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখা থেকে পড়েন আয়েশা সিদ্দীকা আঁখি ও খালেক মল্লিক। এ ছাড়াও সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটি। বৃন্দসংগীত ‘দাও শৈর্য দাও ধৈর্য’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons