প্রায় চার মাস আগে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে তার ভিডিওচিত্র মুঠোফোনে ধারণ করা হয়। ধর্ষকদের চাপে বিষয়টি গোপন রেখেই মেয়েটিকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয় তার দরিদ্র পরিবার। তবু মেয়েটির শেষরক্ষা হলো না।
চাঁদা না পেয়ে ধর্ষণের ওই দৃশ্য মেয়েটির জামাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে দেখায় ধর্ষকেরা। ছড়িয়ে দেয় মুঠোফোনে। জামাইয়ের শারীরিক নির্যাতনের একপর্যায়ে বিবাহবিচ্ছেদে বাধ্য হয় মেয়েটি। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা গত শুক্রবার চারজনকে আসামি করে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানায় মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ গতকাল সোমবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে, বরিশালে দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীর নগ্নচিত্র মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ গত রোববার সন্ধ্যায় মেয়েটির কথিত প্রেমিক আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় গণধর্ষণ ও তার দৃশ্য মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় করা মামলার আসামিরা হলেন রুবেল মুন্সি (২২), রহমত শেখ (২০), রনি (২৩) ও রাসেল (২২)। তাঁদের বাড়ি কাশিয়ানীর বিভিন্ন গ্রামে। তাঁরা এলাকায় বখাটে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ধর্ষণের শিকার ওই মেয়েটি গত রোববার কাশিয়ানী অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোল্লা সাইফুল আলমের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
মামলার এজাহার ও জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে রুবেল মুন্সি ও রহমত শেখ বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে মেয়েটির পথ আটকে বহুবার প্রেম নিবেদন করেছেন। তাঁরা তাকে অশালীন কথা বলতেন এবং কুপ্রস্তাব দিতেন। প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মেয়েটিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা।
গত ২৮ মার্চ মেয়েটিকে কাশিয়ানী রেলওয়ে মাঠের কাছ থেকে অপহরণ করেন আসামিরা। মুখে কাপড় বেঁধে মেয়েটিকে পাশের নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্র দেখিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন চার আসামি এবং এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করা হয়।
মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, মেয়ে বাড়ি এসে ধর্ষণের ঘটনা জানায়। তাঁরা গোপনে গ্রাম্য চিকিৎ সক দিয়ে মেয়ের চিকিৎ সা করান। এ ঘটনার পর ধর্ষকেরা মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে বলে, নইলে এসিড নিক্ষেপ করা হবে বলে হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি ধর্ষণের বিষয়টি গোপন রেখেই নড়াইলের এক ব্যক্তির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন।
মেয়েটির দরিদ্র রাজমিস্ত্রি বাবা বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন পরই ধর্ষকেরা আমার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে, নইলে ধর্ষণের ভিডিও মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু চাঁদা দিতে না পারায় তারা মেয়ের জামাইকে কাশিয়ানীতে ডেকে এনে ধর্ষণের ভিডিওচিত্র দেখায়। এ ঘটনার পর মেয়ের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। স্বামী তাকে বেদম মারধর শুরু করে। ধর্ষকেরা ভিডিওচিত্রটি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতেও পাঠায়। এতে মেয়ের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে জামাই আমাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ১৩ জুলাই তারা মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। ওই দিনই মেয়ে বাড়ি এসে কাজির মাধ্যমে জামাইকে তালাকনামা পাঠাতে বাধ্য হয়।’
এ ব্যাপারে কাশিয়ানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মান্নান আলী বলেন, পুলিশ ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে মামলা নিয়েছে। আলামত হিসেবে ধর্ষণের ভিডিও সিডি জব্দ করা হয়েছে।
ওসি বলেন, চার আসামি বখাটে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে, আপত্তিকর ভিডিওচিত্র মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ ও ঘৃণায় ১৮ জুলাই রাতে আত্মহত্যা করেন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের ছাত্রী গৃহবধূ সুপর্ণা বালা। এ ঘটনার এক সপ্তাহ না-যেতেই নগরের আরেক কলেজছাত্রীর নগ্নচিত্র ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন তাঁর কথিত প্রেমিক আমিনুল ইসলাম রিয়াজ।
এ ঘটনায় করা মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বখাটে আমিনুল নগরের কেডিসি এলাকায় ডকইয়ার্ড-সংলগ্ন একটি বাড়িতে বাস করেন। পাঁচ-ছয় মাস আগে তিনি নগরের দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নগরের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেন এবং তা মুঠোফোনে ভিডিও করেন।
কয়েক দিন পরই কলেজছাত্রী জানতে পারেন, আমিনুল আগে বরিশাল মহিলা কলেজের ছাত্রী শারমিন আক্তারকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অপকর্ম সইতে না পেরে কলেজ ছাত্রাবাসে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন শারমিন। তখন থেকে আমিনুলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন মেয়েটি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমিনুল তাঁর মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মেয়েটি ও তাঁর পরিবারকে হয়রানি করতে থাকেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল মডেল থানার ওসি মো। জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোববার সদর রোড এলাকা থেকে আমিনুলকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ওই ছাত্রীর নগ্ন ভিডিওচিত্রসহ একটি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই কলেজছাত্রী নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। আমিনুলকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রথম আলো




১০:৫৬ AM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন