ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে তিনটি বোমা বিম্ফোরণে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত একশ ১৩ জন।
বিস্ফোরণের পর নয়াদিল্লি, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোর ও কলকাতায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বুধবার বিকেল ৬টা ৫৪ মিনিটে প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয় দক্ষিণ মুম্বাইয়ের জাভেরী বাজারে। এক মিনিট পর দ্বিতীয় বোমাটি বিস্ফোরিত হয় দক্ষিণ মুম্বাইয়েরই ওপেরা হাউজে। ৭টা ছয় মিনিটে মুম্বাইয়ের কেন্দ্রস্থল পশ্চিম দাদারের কবুতর খানা নামক জায়গায় একটি বাস স্টপে তৃতীয় বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটে।
এ সময় কর্মক্ষেত্র থেকে মুম্বাইবাসীরা ঘরে ফিরে থাকেন।
ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে মৃতের সংখ্যা ২১ উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই বিস্ফোরণের পর সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্ত করছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষী (এনএসজি) ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দলও এ তদন্তে অংশ নিচ্ছে।
হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃখপ্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানও এ হামলায় নিন্দা ও দুঃখপ্রকাশ করেছে।
২০০৮ সালের নভেম্বরে জঙ্গি হামলায় মুম্বাইয়ে অন্তত একশ ৭০ জন নিহত হয়।
সন্দেহ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনকে
এনডিটিভি জানিয়েছে, এটি সন্ত্রাসী হামলা বলে নিশ্চিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামলায় ই¤েপ্রাভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়।
এ হামলার দায়িত্ব এখন পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেনি। হামলার জন্য লস্কর-ই-তৈয়বার ঘনিষ্ঠ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনকে সন্দেহ করা হচ্ছে বলে মুম্বাই পুলিশের অপ্রকাশিত সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে এনডিটিভি।
হামলার পরপর মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহান বিবিসিকে বলেন, এটি সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলা।
তিনটি বিস্ফোরণস্থলেই নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে সিএনএন-আইবিএনকে জানান চৌহান। ওপেরা হাউজে বিস্ফোরিত বোমাটি সবচেয়ে শক্তিশালী বলে জানান তিনি।
এনডিটিভি জানায়, জাভেরি বাজারে বিস্ফোরণটি ঘটে একটি সরু গলিতে। ওই গলিতে বেশকিছু খাবারের দোকান রয়েছে যেখানে লোকজন বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরার আগে খাওয়ার জন্য থামেন।
দাদারে বিস্ফোরণটি ঘটে একটি বাস স্টপে বিদ্যুতের খুঁটির মিটার বক্সে। ওপেরা হাইজে বিস্ফোরণ ঘটে প্রাসাদ চেম্বার নামে একটি ভবনে।
পুলিশ বলছে, দাদারের বিস্ফোরণস্থল বাসস্টপে থাকা ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরা থেকে পাওয়া ফুটেজ এ ঘটনা তদন্তে কাজে লাগবে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বিস্ফোরণের পরপরই সাংবাদিকদের বলেন, "মুম্বাইয়ে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১০ জন নিহত এবং একশ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।"
বৃহস্পতিবার তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।
বিস্ফোরণের ঘটনার পর মুম্বাইবাসীদের ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দিয়ে মুম্বাই পুলিশের তরফ থেকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হয়।
মনমোহন-ওবামা-সোনিয়ার নিন্দা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এক বিবৃতিতে এ বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরামকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে মুম্বাইবাসীকে শান্ত থাকারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এক বিবৃতিতে ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। হতাহতের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক ও একতাবদ্ধ থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, "মুম্বাইয়ে এ জঘণ্য হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার। এই সব অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য আমরা সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব দিচ্ছি।"
মুম্বাইয়ের এ বিস্ফোরণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলিউডের অনেক তারকা।
'৯৩ থেকে হামলার লক্ষ্যস্থল মুম্বাই
সিএনএন-আইবিএনের টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, একটি হামলাস্থলে দোমড়ানো- মোচড়ানো ধাতব দণ্ড, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কতগুলো মোটরসাইকেল ও গাড়ি পড়ে আছে।
যশরাজ জাইন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএন-আইবিএন টেলিভিশনকে বলেন, "অফিসে বসে আমরা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাই। বাইরে তখন ব্যাপক হট্টগোল। আমরা দেখি আগুণ জ্বলছে এবং দুই বা তিনটি মৃতদেহ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।"
গত কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাসীদের হামলার লক্ষ্যস্থল হয়ে উঠেছে মুম্বাই। ১৯৯৩ সালে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও অন্য কয়েকটি জায়গায় একযোগে বোমা হামলায় অন্তত দুইশ' ৬০ জন নিহত হয়।
২০০২ সালে জাভেরি বাজারে দুটি বোমা বিস্ফোরণে ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। ২০০৬ সালে মুসলিম জঙ্গিরা মুম্বাইয়ের রেলে বোমা হামলা চালালে একশ' ৮০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম




২:২৫ PM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন