বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নে গতকাল শনিবার এক আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণ ও অপহরণের চেষ্টা করেন আবু মুসা নামের এক যুবক। এ সময় বাধা দিলে কিশোরীর মা, বৃদ্ধ দাদা ও পাঁচ বছরের ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন ওই যুবক।
এলাকাবাসী মুসাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। মুসা আশির দশকে অভিবাসন করা (স্থানীয়ভাবে সেটেলার হিসেবে পরিচিত) লামার রূপসী বাজার মুসলিমপাড়ার শাহজাহানের ছেলে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কিশোরীর মা হ্লামেচিং (৩৬), দাদা অংসাউ মারমা (৭০) ও ভাই মংনুচিং মারমা (৫)।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, লামা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে রূপসীপাড়া ইউনিয়নের সিলেরতুয়া নাইক্ষ্যংঝিড়ি আগার নির্জন জুমঘরে থাকে ওই কিশোরীর পরিবার। গতকাল তার বাবা জুমঘরে ছিলেন না। এই সুযোগে স্থানীয় বখাটে যুবক আবু মুসা সেখানে যায়। প্রথমে সে ঘরের ধারালো দা-গুলো খুঁজে নেয়। পরে সে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং টেনেহিঁচড়ে অপহরণের চেষ্টা করে। এ সময় কিশোরীর মা হ্লামেচিং ও বৃদ্ধ দাদা বাধা দিলে আবু মুসা তাঁদের দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এবং কিশোরীর হাতে দা দিয়ে কোপ দিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করে। মা ও দাদার সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় কিশোরী পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। পরে কিশোরীর পাঁচ বছরের শিশু ভাইকেও কুপিয়ে হত্যা করে মুসা।
রূপসীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নাইক্ষ্যংঝিড়ির রমজান আলী বলেন, ‘জানতে পেরেছি কিশোরীকে ধর্ষণের বাধা দেওয়ায় আবু মুসা নৃশংসভাবে ধারালো দা দিয়ে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।’
পার্শ্ববর্তী নোয়াপাড়ার বাসিন্দা ক্যজহ্লা মারমা বলেন, জুমঘরটি পাড়া থেকে দূরে নির্জন এলাকায়। ঘটনার পর দ্রুতগতিতে পাড়া দিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহ হওয়ায় পাড়াবাসী মুসাকে আটক করে।
ক্যজহ্লা মারমা বলেন, আপাতদৃষ্টিতে শুধু ধর্ষণের কারণে হত্যা করা হয়েছে মনে হয়েছে। তবে জমি নিয়ে কিশোরীর নানির সঙ্গে আবু মুসার বাবা শাহজাহান ও তার চাচার বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া সিলেরতুয়া ও নাইক্ষ্যংঝিড়িতে আশির দশকে বাইরের লোকজনের অভিবাসনের পর থেকে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিশেষ করে আদিবাসীদের সঙ্গে ভূমি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। বর্তমানে তা চরম আকার ধারণ করেছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ওই ভূমি বিরোধের যোগসূত্র রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা দরকার বলে ক্যজহ্লা মারমা মন্তব্য করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হোসাইন বলেছেন, লাশ তিনটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। আহত ওই কিশোরী আবু মুসাকে খুনি হিসেবে শনাক্ত করেছে।
ওসি বলেন, এ ঘটনা শুধু ধর্ষণে বাধা দেওয়ার কারণে নাকি আরও অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে।
ঘটনাস্থল দুর্গম হওয়ায় সেখানে গিয়ে আটক আবু মুসা ও তার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।




২:০৮ PM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন