বুধবার, ৬ জুলাই, ২০১১

ভিকারুননিসার সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে ওই শাখার দুই শিক্ষক বরুণ চন্দ্র বর্মণ এবং আবুল কালাম আজাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই তিনজন শিক্ষক ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানের আরও যে চারজন শিক্ষকের আচার-ব্যবহার সম্পর্কে আপত্তি উঠেছে, তাঁদের অন্য শাখায় বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন বিষ্ণুপদ বাড়ৈ, বাবুল কুমার কর্মকার, বিশ্বজিৎ চন্দ্র মজুমদার ও প্রণব কুমার ঘোষ। 
একই সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান লুৎফর রহমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি শিক্ষক হিসেবে থাকবেন। বসুন্ধরা শাখা প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন আজিমপুর প্রভাতি শাখার প্রধান লুৎফুন্নেছা।
গতকাল মঙ্গলবার কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে পরিমল জয়ধরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে বাড্ডা থানা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়। গতকালই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে ছাত্রীটির বাবা তাঁর মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পর কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম এবং ভারপ্রাপ্ত শাখাপ্রধান লুৎফুর রহমান ব্যবস্থা নিতে কালক্ষেপণ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হোসনে আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রীটি অভিযোগ না করায় এত দিন পুলিশকে জানানোর সুযোগ ছিল না। গত সোমবার রাতে অভিযোগ পাওয়ার পরই মঙ্গলবার পরিচালনা পরিষদের সভায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।’ 
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবিতে গতকাল বেইলি রোডের মূল শাখা ও বসুন্ধরা শাখার সামনে বেশ কিছু অভিভাবক বিক্ষোভ করেছেন। বেইলি রোডে কলেজের মূল ক্যাম্পাসে ছাত্রীরা জড়ো হলেও কয়েকজন শিক্ষক তাঁদের মিছিল করতে দেননি, এমনকি কলেজ মিলনায়তনে ডেকে নিয়ে তাঁদের তিরস্কার করেন। এ সময় ছাত্রীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়। তবে গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। 
জানা যায়, বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধর বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে নিজের বাসায় ধর্ষণ করেন। প্রাইভেট পড়তে আসা অন্য ছাত্রীদের কৌশলে বিদায় দিয়ে তিনি ওই ছাত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান। এ ছাড়া তিনি মুঠোফোনে ঘটনার ছবি রেকর্ড করেন। এ ঘটনায় গত ২৮ জুন স্কুলের ৬১ জন ছাত্রী লিখিতভাবে ওই শিক্ষকের নামে অভিযোগ করে। কয়েক দিন ধরে অভিভাবকেরা ওই শিক্ষকের বিচার দাবি করে আসছিলেন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেরিয়ে আসে, বসুন্ধরা শাখায় আরও কয়েকজন শিক্ষক ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন ও আপত্তিকর আচরণ করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ, উপপরিচালক সাধন কুমার বিশ্বাস, উপপরিচালক (ঢাকা অঞ্চল) এ কে এম মোস্তফা কামাল এবং জেলা শিক্ষা কর্মকতা মো. আবদুস সামাদ গত সোম ও মঙ্গলবার কলেজের মূল ও বসুন্ধরা শাখা পরিদর্শন করেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে জানান, বসুন্ধরা শাখায় কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ধর্ষণের দায়ে মূল অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
গতকাল কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভায় পুরো বিষয়টি তদন্তের জন্য পরিচালনা পরিষদের সদস্য খন্দকার আফরোজা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেছে।

প্রথম আলো

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons