মো. রানা। বয়স ১২ বছর। ২৫ দিন ধরে সে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দী। সেখানে তাকে দাগি আসামিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
কারাগার, পুলিশ ও অন্য সূত্রগুলো বলেছে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার চারিতলা গ্রামের দরিদ্র হাবু মিয়ার ছেলে মো. রানা। নিয়ামতপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি দোকান থেকে মুঠোফোন চুরির অভিযোগে গত ১৫ জুন রাতে লোকজন তাকে আটক করে। তার কাছ থেকে মুঠোফোন উদ্ধার করা হয় এবং তাকে মারধর করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরদিন দোকানের মালিক তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। দোকানের মালিক সেদিনই রানার বয়স ১৭ বছর উল্লেখ করে চুরির মামলা করেন। ওই দিন তাকে কিশোরগঞ্জের বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। বিচারিক হাকিম এইচ এম শফিকুল আলম জামিন নামঞ্জুর করে রানাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকে সে কিশোরগঞ্জ কারাগারে রয়েছে।
সূত্র জানায়, মামলার এজাহারে রানার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ বছর। মামলা লিপিবদ্ধ করার সময় পুলিশ তার বয়স উল্লেখ করেছে ১৬ বছর। আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তার বয়স দেখানো হয়েছে ২০ বছর।
রানার মা হেলেনা বেগমের ভাষ্য, তাঁর ছেলের বয়স মাত্র ১২ বছর। সে চুরি করে থাকলে তার বিচার করা হোক। কিন্তু তাকে জেলখানায় খুনি ও ডাকাতের সঙ্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে।
মানবাধিকার আইনজীবী জেসমিন আরা রোজী বলেন, শিশু রানাকে কারাগারে বন্দী রাখা জাতিসংঘের শিশু সনদের পরিপন্থী। তা ছাড়া তার বয়স ১৬ না হলেও ১৬ লিখে কারাগারে পাঠানো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তিনি বলেন, জেল কোড অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচের কোনো শিশুকে কারাগারে রাখার বিধান নেই।
কারাগার পরিদর্শন শেষে ৩ জুলাই জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত চিকিৎ সক মুখলেছুর রহমান জানান, রানার বয়স ১৬ বছর নয়, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তার বয়স যে ১৬ বছরের নিচে, ডাক্তারি পরীক্ষা করলেই তা বেরিয়ে আসবে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করিমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মহর আলী প্রথম আলোকে বলেন, মামলার সময় সঠিক বয়স নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া শিশুটির জন্মসনদও দেখাতে পারেনি কেউ। তাই বয়স ১৬ লেখা হয়েছে।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদ হোসেন বলেন, ‘শিশুটির বয়স ১৬ বছরের কম হলে আমরা শিশু আইনে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করব।’
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের কারাধ্যক্ষ মো. শফিকুল আলম বলেন, শিশুটির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ৩ জুলাই কারাগারের পক্ষ থেকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজহার আলী মিয়া চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ব্যাপারে কী করা যায়, ভেবে দেখা হচ্ছে।




১১:৪৪ AM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন