বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০১১

 বিয়ে ভেঙে স্কুলের পথে কাকলী

বিয়ে ভেঙে দিয়ে স্কুলে আসতে শুরু করেছে কাকলী (১১)। তাকে সাহায্য করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৫০ নম্বর কালীকৃর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী কাকলী।
ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাতব্বর বাড়িতে তাদের কুঁড়েঘর। প্রান্তিক কৃষক বাবা মহসিন ও মা রহিমা বেগম তার বিয়ে ঠিক করেন একই গ্রামের শেখ বাড়ির সিরাজ মাঝির ছেলে মিজান মাঝির (২৮) সঙ্গে। মিজানও পেশায় জেলে।
গত জুনের মাঝামাঝি সময় ছেলেপক্ষ মেয়েকে স্বর্ণের নাকফুল ও কানফুল দিয়ে বাগদান করে। কথামতো ৮ জুলাই বিয়ের দিন ধার্য করা হয় কাকলীর। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় কাকলী এ বিয়ে মেনে নিতে পারে না। সে জানায়, ওই নাকফুল ও কানফুল পরিয়ে দেওয়ার পর থেকে তার ঘুম নেই; নাওয়া-খাওয়া নেই। কোথাও যেতে পারছে না, খেলতে পারছে না বন্ধুদের সঙ্গে। মা-বাবা স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। সারা দিন ঘরের মধ্যে বসে থাকতে হয়। ‘বিয়ে বিয়ে’ করে সমাপনী পরীক্ষা দিতে দেননি মা-বাবা। অনেক কষ্টে সহপাঠীদের দিয়ে কাকলী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মুঠোফোন নম্বর জোগাড় করে। মুঠোফোনেই সবকিছু জানিয়ে তার বিয়ে বন্ধ করতে প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে সে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাকলী ফোন করে আমাকে বলে—“স্যার, আমারে বাঁচান। আমার বিয়া ঠিক অইছে। আমনে আব্বারে বুজান, এই বিয়া বন্দ করেন, আমি পড়তাম চাই।” এ কথা শোনার পর আমি ও কয়েকজন শিক্ষক কাকলীর বাড়িতে একাধিকবার যাই। তার মা-বাবাকে বাল্যবিবাহের কুফল, আইনের ধারা-শাস্তি বুঝিয়ে ভয়ভীতি দেখাই। একসময় কাকলীর মা-বাবা তাঁদের ভুল বুঝতে পারেন এবং কাকলীকে আবার স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। গত মঙ্গলবার থেকে মেয়েটা স্কুলে আসছে।’
প্রধান শিক্ষক জানান, পড়াশোনার প্রতি কাকলীর প্রচণ্ড আগ্রহ। ছাত্রীও ভালো। ওর সমাপনী পরীক্ষা আলাদাভাবে নেওয়া হবে। কাকলী বলে, ‘আমার ভালো লাগদেছে। স্যারে গো জন্য আমি আবার স্কুলোত আসতাম পারছি। আমি অনেক পড়তাম চাই।’

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons