বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০১১

ভিকারুননিসার শিক্ষক পরিমল গ্রেপ্তার

ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল বুধবার সকালে কেরানীগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর পরিমলকে গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। তবে তিনি কোনো কথা বলেননি।
এদিকে ঘটনার পর থেকে ছাত্রীটির বাবা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মেয়েটিকে নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছে তার পরিবার।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার পরিমলের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের মামলা হয়। তবে তিনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উপকমিশনার জানান, আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হবে।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পরিমল বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানতে পারেন, তিনি কেরানীগঞ্জে অবস্থান করছেন। ওই খবরের ভিত্তিতে পুলিশ এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
সূত্র জানায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রাশেদ খান মেননের বরাবর লিখিত আবেদনে ভুক্তভোগী ছাত্রী নির্যাতনের পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছে। বিচার চেয়ে ছাত্রীটি লিখেছে, ‘ব্যাপারটি আপনারা সুবিবেচনায় এনে আমার ওপর পরিমল স্যার যে বর্বরোচিত, অমানবিক, অনৈতিক, ঘৃণিত ও পাশবিক আচরণ করেছেন, তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
গতকাল বুধবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওই ছাত্রীর পিতামহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার নাতনি ঘটনাটি আমাদেরকে জানানোর আগে স্কুলের অধ্যক্ষ ও শাখাপ্রধানকে জানিয়েছিল। তবে তাঁরা অযথা সময় নষ্ট করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালান। আর এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে ঘটনার বিচার চাইলে নাতনির নাম-পরিচয় থানা ও মিডিয়ার কাছে প্রকাশ হয়ে যাবে বলে অধ্যক্ষ চুপ থাকার পরামর্শ দেন।’
ছাত্রীটির দাদা প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘নাতনি ভয়ে আমাদের কিছু বলেনি। একদিন বাসায় এসে আর স্কুলে যাবে না বলে কান্নাকাটি করেছিল। স্কুলের অভিভাবকেরা বিষয়টি আমাদের জানান। পরে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হই। এর মধ্যেই অধ্যক্ষ নাতনির মা ও বোনের কাছে ফোন করে ছাত্রীর পরিচয় প্রকাশ না করার পরামর্শ দেন।’
ছাত্রীর দাদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুলের মতো অভিজাত ও নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষকের কাছে ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়, তাহলে আমরা অভিভাবকেরা কোথায় যাব?’
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিমল জয়ধরের ঘটনা জানার পর তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ এককভাবে একজন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে পারেন না। তাই পরিচালনা পরিষদের সভা ডেকে তাঁকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পরও মামলায় আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’
গতকাল অধ্যক্ষের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৯ জুলাই শনিবার পূর্বঘোষিত একাদশ শ্রেণীর অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা এবং প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সম্পূরক ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে।
ছাত্রীর লিখিত বক্তব্য: কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতির কাছে দেওয়া বক্তব্যে ছাত্রীটি জানায়, গত মে মাস থেকে সে পরিমলের কোচিং সেন্টারে যাওয়া শুরু করে। স্কুলের কাছেই পরিমল জয়ধর, বাবুল কুমার কর্মকার, বিষ্ণুপদ বারুই, বরুণচন্দ্র বর্মণ ও বিশ্বজিৎ চন্দ্র মজুমদার বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং করাতেন। ঘটনার দিন ছাত্রীটি কিছু সময় পরে কোচিংয়ে গিয়েছিল। এই অজুহাতে শিক্ষক সবার পড়া শেষে ছাত্রীটিকে অপেক্ষা করতে বলেন। বিলম্বে আসায় ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর অন্যদের চলে যেতে বলেন।
ছাত্রীটি জানায়, পরিমল একপর্যায়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছু বোঝার আগেই মুখ বেঁধে ফেলেন। হাত ছোড়াছুড়ি করলে ওড়না দিয়ে দুই হাত বেঁধে ফেলেন। পরে গায়ের জামাকাপড় খুলে ছবি তোলেন। এরপর তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এসব ঘটনা কাউকে জানানো হলে নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন ওই শিক্ষক। গত ১৭ জুন ওই শিক্ষক একই কাজ করেন। উপায় না দেখে ছাত্রীটি ১৯ জুন বিষয়টি তার সহপাঠীদের জানায়। ২১ জুন শাখাপ্রধান লুৎফর রহমানকে ঘটনাটি জানায় ওই ছাত্রী। তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। এর পরও পরিমল জয়ধর স্কুলে পড়াতে এলে ২৮ জুন দশম শ্রেণীর সব ছাত্রী লিখিতভাবে বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানায়। এর মধ্যেই ঘটনাটি স্কুলে জানাজানি হয়ে গেলে ছাত্রীর পরিবার বিপাকে পড়ে যায়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons