বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১১

স্কুলপড়ুয়া শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে


স্কুলপড়ুয়া ছেলেদের প্রায় সাত শতাংশ এবং মেয়েদের ১৬ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক ফারাহ দীবা এ তথ্য প্রকাশ করেন। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে, ‘সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ ইন স্কুল চিলড্রেনস লাইফ’ শীর্ষক এক সেমিনারে ফারাহ দীবা বলেন, বাংলাদেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এবং শহরের তুলনায় গ্রামের শিশুরা বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে। যৌন হয়রানির কারণে শিশুর বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন হারুন-অর-রশীদ বলেন, স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় আছে। পথশিশু ও বস্তিবাসী শিশুরা বেশি নিরাপত্তাহীন। তিনি সর্বস্তরের শিশুকে নিয়ে একটি সমীক্ষার ওপর জোর দেন। যৌন হয়রানি রোধে পারিবারিক মূল্যবোধ টিকিয়ে রাখারও আহ্বান জানান অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান শহীদ আখতার হোসেন বলেন, ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী যখন হয়রানির শিকার হয় তখন এর প্রভাব পুরো সমাজে পড়ে। আমরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। কী করে আমাদের শিশুদের রক্ষা করা যাবে তা এখনই ভাবতে হবে।’
নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে গৃহীত মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের কর্মসূচি পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, শিশুদের স্বার্থে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধাপে ধাপে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। 
কারা যৌন হয়রানির শিকার সমীক্ষায় রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও সীতাকুণ্ডের নয় থেকে ১৭ বছর বয়সী ৫৮১টি শিশু অংশ নেয়। ইভ টিজিং, যৌন স্পর্শ ও যৌন নির্যাতন এই তিনটি বিষয়ে তারা বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়। দেখা গেছে, পরিচিতজনেরাই সবচেয়ে বেশি হয়রানি করছে শিশুদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষক ছাত্রছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করছেন। এসব ভুক্তভোগী শিশু আত্মীয়স্বজন ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। 
সমীক্ষার আওতাভুক্ত পাঁচটি জেলায় গ্রামাঞ্চলে ৫ দশমিক ৭ জন ছেলে এবং ১০ দশমিক ৫ জন মেয়ে; শহরাঞ্চলে শতকরা নয়জন ছেলে এবং ৪ দশমিক ৮ জন মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বা বন্ধুবান্ধব নিকটাত্মীয়কে হয়রানির শিকার হতে দেখেছে। এই শিশুদের ২৫ শতাংশ মারাত্মক মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে, ২০ শতাংশ চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে এবং ৫৭ দশমিক ২ জন বিষণ্নতায় ভুগছে। 
গবেষক ফারাহ দীবা বলেন, শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার শিশুরা ভবিষ্যতে নিজেরা নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। তাদের যৌনকর্মী, মাদকাসক্ত হওয়া ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। 
ফারাহ দীবা বাবা-মায়ের প্রতি শিশুদের কথা বলার পরিবেশ তৈরি করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সমীক্ষার আওতায় আসা শিশুরা অনেক সময় তাদের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে চায়নি। বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের সমীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিলেও অনেক প্রতিষ্ঠান তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons