শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১১

‘তেল বা চিনি কিনলে ডাল খেজুর কিনতেই হবে’

টিসিবি নির্ধারিত বাজারমূল্যের তালিকা

টিসিবি নির্ধারিত বাজারমূল্যের তালিকা

‘আমরা বিক্রি করি প্যাকেজ সিস্টেমে। তেল বা চিনি কিনলে ডাল, খেজুর কিনতেই হবে।’ টিসিবির ডিলারের কর্মীরা নিয়মটা জানিয়ে দেন। এই নিয়মের কথা লেখা আছে টিসিবি সদর দপ্তরের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রেও। পাঁচ কেজি চিনি বা তেলের সঙ্গে পাঁচ কেজি ডাল কেনা বাধ্যতামূলক। যদিও গতকাল কারওয়ান বাজারের ওই খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র খোলাই হয়নি।
ইন্দিরা রোডের মামুনুর রশীদ (৬২) এর আগেও এসেছিলেন টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে। সেদিন ছিল ছুটির দিন, বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল রোববার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে আসতে। এই বিক্রয়কেন্দ্র খোলা থাকে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে টিসিবি সদর দপ্তরের নিচতলার বিক্রয়কেন্দ্রে সকাল ১০টায় এসে তিনি দেখেন তালা ঝুলছে। আর বিজ্ঞপ্তি টাঙানো, মজুদ না থাকায় খুচরা বিক্রি আপাতত বন্ধ। কবে খুলবে, কখন খুলবে কেউ জানে না। এরই মধ্যে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন ক্রিসেন্ট রোড থেকে আসা খন্দকার মনিরুজ্জামান (৪৮), মগবাজার থেকে আসা হাসান (৫৫) প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি পড়ে হাসান জোরে জোরে বলে উঠলেন, আল্লাহ আল্লাহ। তাঁরা ছাড়বার পাত্র নন, তিনতলার টিসিবি দপ্তরে গিয়ে জানতে চাইলেন কেন বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ, কখন খুলবে।
টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বললেন, বিক্রয়কেন্দ্র চালানোর জন্য আলাদা লোকবল তাঁদের নেই। অফিসের কর্মীরাই এই কাজটা করছেন সময়ের প্রয়োজনে। এখন তাঁদের মজুদ ফুরিয়ে গেছে। তাঁরা গোডাউনে গেছেন মাল আনতে। এলেই আবার বিক্রি শুরু হবে। তবে গতকাল থেকে ১০টি ট্রাক ৬২ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করতে ঢাকার ১০টি স্থানে চলে গেছে। জায়গাগুলো হলো: প্রেসক্লাব, শাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি, মিরপুর ১০, যাত্রাবাড়ী মোড়, শেরেবাংলা নগর পরিকল্পনা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি মতিঝিল, শ্যামলী, ইডেন কলেজ, নয়াবাজার ও মধ্যপাড়া।
কাগজে লিখেছে, টিসিবির ডিলাররা উধাও। কথাটা ঠিক কি না? টিসিবির কার্যালয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান তালুকদার বললেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, অভিযোগ ঠিক নয়।
আর তথ্যকর্তা জানালেন, টিসিবি দুই হাজার ৪৬৩ জনের বেশি ডিলার নিয়োগ দিয়েছে সারা দেশে। তাঁদের মধ্যে এক হাজার ৫৫০ জন ডিলারের প্রত্যেকে দুই টন চিনি, এক হাজার ২০০ লিটার তেল, ৫০০ কেজি মসুর ডাল, ৫০০ কেজি ছোলা, ৫০০ কেজি খেজুর নিয়েছেন। তাঁরা চিনি ৫৮ টাকা, সয়াবিন ১০২ টাকা, মসুর ডাল ৬৮ টাকা, ছোলা ৫৮ টাকা প্রতি কেজি বিক্রয় করছেন।
তাঁরা সবাই ঠিকমতো বিক্রি করছেন কি না, তা তদারক করার মতো লোকবল তাঁদের নেই। এটা করার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।
তবে নিচতলার বিক্রয়কেন্দ্রে বিজ্ঞপ্তি ঝোলানো আছে, চিনি বা তেল কিনলে এর সঙ্গে মসুরের ডাল সমপরিমাণ কেনা বাধ্যতামূলক। এটা কেন? এই প্রশ্নে টিসিবির চেয়ারম্যানের জবাব, ‘আমাদের ডালও তো বিক্রি করতে হবে।’
তথ্য কর্মকর্তা বললেন, ডাল তো এক বছরের বেশি স্টক করা যায় না।
ডিলারদের দোকানে কী অবস্থা জানার জন্য ২৩ ইন্দিরা রোডের মিজান স্টোরস এবং ৫৮ পশ্চিম রাজাবাজারের রফিক এন্টারপ্রাইজে যাওয়া গেল। তাদের কাছে তেল-চিনি সবই আছে, কিন্তু নিতে হবে ‘প্যাকেজ সিস্টেমে’। প্যাকেজ সিস্টেমটা হলো, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি সয়াবিনের সঙ্গে সমপরিমাণ মসুরের ডাল আর খেজুর কেনা বাধ্যতামূলক। সেখানকার কর্মচারীরা বললেন, ‘চিনি আর সয়াবিনের চাহিদা খুব। কিন্তু ডাল আর খেজুর বিক্রি করতে না পারলে আমাদের চলবে কেন?’
মসুরের ডাল কেন লোকে টিসিবি থেকে কিনতে চায় না? এখানে তো দাম কম!
মিজান স্টোরসের শিশু বিক্রেতা বলল, ‘স্যার, ডালের মধ্যে তিন-চার রকমের দানা মেশানো। আর ময়লা। এ কারণে লোকে কিনতে চায় না।’ দুই কেজি করে চিনি, তেল আর মসুরের ডাল কেনা গেল। ওজন ঠিক আছে, দামও লাল ব্যানারে ঝোলানো মূল্য তালিকার মতোই।
রাস্তার ধারের সাধারণ দোকানে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, চিনির কেজি ৭০ টাকা।
এর আগে হাতিরপুল বাজার থেকে নানা রকমের সবজি কেনা হয়েছে। দোকানি বলল, শসা আর ধনেপাতা ছাড়া সবজির দাম রোজার আগেই বেড়েছে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ধনেপাতার দাম। ৪০০ টাকা কেজি। ১০০ গ্রামের দাম পড়ল ৪০ টাকা।
প্রথম আলো

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons