হ-বাংলা নিউজ : গর্ভধারণের ১৬ সপ্তাহ পরেই গর্ভথলির পানি ভেঙে গিয়েছিল। সাধারণ হিসাবে চার মাস বয়সী এই গর্ভশিশুর বাঁচার কথা নয়। কিন্তু সব নিয়ম মানলে পৃথিবীর চলবে কেন? ইংল্যান্ডের লরা হিল তাই হয়ে রইলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। এই মহিলা এ অবস্থা থেকেও জন্ম দিয়েছেন একেবারে সুস্থ এক সন্তান। সম্প্রতি সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হয়। শিশুটির নাম রেখেছেন চার্লি। তবে সবাই তাকে ডাকছে 'টাইনি চার্লি' বা 'পিচ্চি চার্লি' বলে।
গত বছরের জুলাইয়ে গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার মধ্যেই ছিলেন মিস লরা হিল (২০)। তাঁর সঙ্গী রিচার্ড ফোরহার্ড (২২) জানান, অক্টোবরে লরা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁর গর্ভধারণের ১৬ সপ্তাহ চার দিন চলছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নেওয়া হয় নরফোক অ্যান্ড নরউইচ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান,
গর্ভথলির পানি ভেঙে গেছে। এ শিশুকে বাঁচানো অসম্ভব। সাধারণত তিন মাস বা ১২ সপ্তাহ অতিক্রম হয়ে গেলে মানবভ্রূণ গর্ভথলিতে ধীরে ধীরে মানবাকৃতি পেতে শুরু করে। তবে এ সময়ে মাতৃজঠরের ঝিলি্লগুলো পিচ্ছিল ও পানিপূর্ণ থাকা অবশ্যিক শর্ত। কোনো কারণে এই পানি ভেঙে গেলে গর্ভস্থ শিশুকে বাঁচানো তো অসম্ভব হয়ই, একই সঙ্গে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে না পারলে মায়ের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ে। বিষয়টা জানানো হয় লরাকে। তাঁর জীবন বাঁচাতে গর্ভপাতের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। লরা চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের বর্তমান অবস্থা কী? আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টসহ অন্য স্ক্যানে দেখা যায় শিশুটি বেঁচে আছে। তার রক্ষাকবচ শুধু চারপাশের ঝিলি্লগুলো। তবে দ্রুতই এগুলো শুকিয়ে যাবে। লরা কষ্ট সয়ে দুই সপ্তাহ সময় নিলেন গর্ভপাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
তাঁর প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসক জানালেন, এ অবস্থায় শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকবে মাত্র এক ভাগ। আর যদি সে বেঁচেও যায়, তার মস্তিষ্ক বিকৃতি, ফুসফুসের সমস্যাসহ বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। অন্য যে কেউ হলে এই উত্তরে দমে যেতেন। কিন্তু লরার কাছে মনে হলো এক ভাগ সম্ভাবনা মানেও সম্ভাবনা। কারণ, এখনো তাঁর সন্তানটি জীবিত। তিনি তাকে হত্যা করতে রাজি হলেন না। সন্তান বাঁচানোর এক ভাগ সম্ভাবনার আশা নিয়েই গর্ভপাত এড়িয়ে প্রবল কষ্ট সহ্য করার ঝুঁকি নিলেন লরা। নিয়মিতভাবে চলতে থাকল তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
সপ্তাহে দুই বার স্ক্যান আর রক্ত পরীক্ষা করান, প্রতিবার স্ক্যান রুমে আসার সময় বুক দুরুদুরু করে_এই বুঝি ডাক্তার দিয়ে দিলেন অশুভ সংবাদ! কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছু হলো না। প্রতিবারই চিকিৎসকরা তাঁকে আশ্বস্ত করলেন_তাঁর গর্ভের সন্তান এখনো জীবিত আছে, নড়াচড়া করছে। কিন্তু লরা এও জানতে পারেন, ৯৯ ভাগ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকায় শিশুটিকে দাফনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে পরিবারের লোকজন। এমন সময় ২১ সপ্তাহ পর লরাকে অবাক করে চিকিৎসক জানান, গর্ভস্থ শিশুর চারপাশের ছিঁড়ে যাওয়া ঝিলি্লগুলো আবার জোড়া লেগেছে এবং সেগুলোতে কিছু পানিও জমেছে। এভাবেই ৩৯ সপ্তাহ পাড়ি দেওয়ার পর আবার পানি ভেঙে যায় তাঁর। কিন্তু ততদিনে তাঁর গর্ভে শিশুটি পরিণত। এরপর একটি সফল অস্ত্রোপচার। সুস্থ সন্তান নিয়ে লেবাররুম থেকে বের হলেন লরা হিল। তাঁর দুই বছর বয়সী বড় মেয়ে টিলি্লর সঙ্গে মিল রেখে শিশুটির নাম রাখলেন তিনি চার্লি। তবে সুস্থ হলেও আকারে একেবারে পিচ্চি হওয়ায় 'পিচ্চি চার্লি' উপাধিটা ওর জুটে গেল জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই; কবে এটা তার পিছু ছাড়বে বলা শক্ত! সূত্র : ডেইলি মেইল অনলাইন।




১২:১৯ PM
Akashnill

Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন