তিনি সামিরা। ধনীর দুলালী। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীতে ফ্যাশন-শো, হট ড্যান্স ও ডিজে পার্টির আয়োজক। তবে এ আয়োজনের পেছনে রয়েছে নানা কাহিনী। নানা গল্প। উপরে পার্টি হলেও ভেতরে চলে মদ, বিয়ার, ইয়াবা ও সিসাসহ বিভিন্ন মাদক সেবনের আসর। চলে পতিতাবৃত্তিও। সামিরার গোপন এসব কর্মকাণ্ড ধরা পড়ে গোয়েন্দা জালে। গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। গুলশান ও বনানী এলাকায় প্রায় ৭০-৭৫টি ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবে এক নামে পরিচিত সামিরা।গত ৯ই সেপ্টেম্বর গুলশান ২-এ অবস্থিত থাই রিক্রিয়েশন ক্লাবে অভিযান চালান মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অভিযানে সামিরাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- অগাস্টিন রোজারিও ওরফে পলাশ, সৈয়দ ওবায়দুল করিম ওরফে রুশো ও সামিরা কায়জার। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তারা বলেন, সামিরা কায়জার উচ্চশিক্ষিত। তিনি বিভিন্ন ভাষায় কথা বলায় পারদর্শী। তিনি থাই রিক্রিয়েশন ক্লাবের পক্ষ হয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে কলগার্ল সংগ্রহ করে দিতেন। নিজেও হাই সোসাইটির কলগার্ল হিসাবে কাজ করতেন। এ ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের দায়িত্ব ছিল তার।এ অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৪০৮ ক্যান বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিয়ার ও ৩০ বোতল বিদেশী মদ। যখন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সেখানে হানা দেন তখন ওই বাড়িতে প্রায় ১৫০ নারী-পুরুষ মদ্যপ অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে উচ্চ শব্দে বাজানো মিউজিকের তালে ড্যান্স করছিল। বেশির ভাগ তরুণীর পরনে সংক্ষিপ্ত পোশাক ছিল। পার্টিতে অংশ নেয়া অনেক তরুণ-তরুণীর সামাজিক পরিচয় ছিল রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। অভিযানের সময় তাদের অনেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নানা হুমকি ধমকি দেন। আবার অনেকেই মুখ ঢেকে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।
অবৈধভাবে তৈরি করা বারে থরে থরে সাজানো ছিল নানা ব্র্যান্ডের মদ ও বিয়ার। গ্রেপ্তারকৃত সামিরা কায়জার অকপটে সব কিছু স্বীকার করেন। কিভাবে তিনি এ জগতে এলেন তার বিস্তারিত বর্ণনাও দেন। গুলশান এলাকায় কারা অবৈধ মদ ও বিয়ারের আসর বসায় তাদের অনেকের নামও বলেন তিনি। সামিরা জানায়, এমপি থেকে পুলিশ কর্মকর্তা অনেকেই নিয়মিত তাদের অতিথি হয়ে আসেন। রাতভর ফুর্তি করে সকাল হওয়ার আগে বাসায় ফিরে যান। পরে এ বিষয়ে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। মামলা করেন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রমনা বিভাগের পরিদর্শক রাজু আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন সব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। এতে বিপথগামী হচ্ছে উঠতি বয়সীরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি নেয়া হয় না। অনুমতি নেয়া হলেও বলা হয় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু পরে মদ-বিয়ারের জমজমাট আসর বসানো হয়। শতাধিক মেয়ে এসব অবৈধ বার ও পার্টি সেন্টারে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে কলগার্ল সংগ্রহ করে দেয়। সংক্ষিপ্ত পাশ্চাত্য পোশাক পরা এসব তরুণী নিজেরাও হাই সোসাইটি কলগার্ল হিসাবে কাজ করে। গত ২৯শে জুলাই আরেকটি অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৬,৪৭২ ক্যান বিয়ার ও ১,৭০০ বোতল বিদেশী মদ। গুলশান ২-এর ১১৩ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাড়িতে কোরিয়ান ক্লাবের নামে নিয়মিত মদ-বিয়ারের অবৈধ আসর বসছিল।
এ সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক কিং জং সু-কে। তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় সু’র বাংলাদেশী সহযোগী আবদুর রহিম ওরফে রহমানকে। যৌথভাবে অভিযানটি চালায় র্যাব-১ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ধরে অভিযান চালানো হয়। পরে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক হেলাল উদ্দীন ভূঁইয়া বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন।
ইন্সপেক্টর হেলাল উদ্দীন বলেন, কোরিয়ান ক্লাবের আড়ালে এখানে নিয়মিত মদের আসর বসছিল। কিন্তু তাদের কোন অনুমোদন ছিল না। তিনি বলেন, ক্লাবটিতে নানা রকম অনুষ্ঠানের আড়ালে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলতো বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। ওদিকে র্যাব ১-এর একটি সূত্র জানিয়েছে গুলশান, বনানী এলাকায় অবৈধ মদ-বিয়ারের আসরের পেছনে রাজনীতিবিদ, এমপি ও মন্ত্রীদের হাত রয়েছে। এ ছাড়া এসব হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির ঘনিষ্ঠরাও এসবের আয়োজন করছে। ফলে চাইলেই এসব বন্ধ করা যাচ্ছে না।
তোহুর আহমদ – মানবজমিন




১২:০৫ PM
মম
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন