বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ঝিনাইদহে নির্যাতনের পর গৃহপরিচারিকার চুল কর্তন

ঝিনাইদহ শহরে নির্যাতনের পর এক গৃহপরিচারিকার মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বিবরণ দেন ওই গৃহপরিচারিকা।
কিন্তু গতকাল সকাল থেকে তিনি আর মুখ খুলছেন না।
এলাকাবাসী জানান, ওই গৃহপরিচারিকা শহরের উপশহর পাড়ার বাসিন্দা মশিয়ার রহমান জোয়াদ্দারের বাসায় কাজ করতেন। মশিয়ার রহমান হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গৃহপরিচারিকা মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের জানান, তিনি তিন বছর ধরে মশিয়ারের বাসায় কাজ করছেন। বর্তমানে মশিয়ার ভারতে আছেন। ওই দিন বেলা একটার দিকে তিনি বাসার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এমন সময় বাসায় আসেন মশিয়ারের মেয়ের জামাই তপু ও শ্যালিকা মিরা খাতুন। এ সময় তিনি তাঁদের খেতে বলেন। কিন্তু কোনো কিছু বোঝার আগেই তপু তাঁকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাঁর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখতে পান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আল মামুন বলেন, ওই গৃহপরিচারিকার মাথায় চারটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ডান হাতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ওই গৃহপরিচারিকা কারও সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না। শুধু বলছেন, তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। হাসপাতালের বাইরে সারাক্ষণ কিছু ব্যক্তি ঘোরাফেরা করছেন। যাঁরা কাউকে তাঁর কাছে যেতে দেখলেই পিছু নিচ্ছেন। তিনি সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে কথা বলছেন।
মিরা খাতুন জানান, তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মশিয়ারের বাসায় যান। এরপর হঠাৎ করে বাসায় আসেন তপু। তপু এসে ওই গৃহপরিচারিকার হাত ধরে টানতে টানতে ঘরের মধ্যে নিয়ে যান। এ সময় তপু তাঁকে বের করে দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটলেও এক ঘণ্টা পর তিনি খবর পান, গৃহপরিচারিকাকে মারধর করা হয়েছে। এর বেশি তিনি কিছুই জানেন না।
মশিয়ার দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকে তপুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জেলা সমন্বয়ক আমিনুর রহমান জানান, গৃহপরিচারিকার ওপর এমন নির্যাতন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। মেয়েটি ভয়ে কথা বলতে পারছেন না। মামলা করতেও ভয় পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার সঙ্গে কারা জড়িত, তা এখনো ওই গৃহপরিচারিকা প্রকাশ করেননি। এমনকি মামলাও করতে চাচ্ছেন না।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons