রবিবার, ১২ জুন, ২০১১

চিকিৎসকদের যথেচ্ছ ডিগ্রি ব্যবহার


একশ্রেণীর চিকিৎসক নিজের নামপত্র (ভিজিটিং কার্ড) বা নামফলকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বীকৃত নয় এমন নানা ধরনের ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। বড় মাপের চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে জাহির করার জন্য তাঁরা এটি করেন। আইন বলছে, এসব অস্বীকৃত ডিগ্রি ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, অর্জন করেননি বা কোনো ডিগ্রিই নয়, এমন অনেক কিছুই নামের সঙ্গে ব্যবহার করছেন একশ্রেণীর চিকিৎসক। কেউ কোনো কোর্সে ভর্তি হয়ে লিখছেন এমডি বা এমএস (ইন-কোর্স)। লন্ডন বা ওয়াশিংটনে দু-চার দিনের সেমিনার থেকে ফিরে ডিগ্রি হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এটা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা।


চিকিৎসকদের পেশা চর্চার অনুমোদন, নিবন্ধন এবং দেশি-বিদেশি ডিগ্রির স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। অস্বীকৃত ডিগ্রি ব্যবহারের ব্যাপারে বিএমডিসির সভাপতি আবু সফি আহমেদ আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অস্বীকৃত ডিগ্রি বা পদবি ব্যবহার করা প্রতারণার শামিল। এর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি।’
বিএমডিসি আইনে স্বীকৃতি নেই এমন ডিগ্রি, পদবি বা প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, অস্বীকৃত নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যা দেখে অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে বলে কারও মনে হয়। অস্বীকৃত ডিগ্রি, পদবি ব্যবহার অপরাধ। এই অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের কথা আইনে বলা হয়েছে।
প্রথম আলো গত সপ্তাহে রাজধানীর কয়েকটি এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে চিকিৎসকদের নামপত্র সংগ্রহ করে। সেসব নামপত্র নিয়ে প্রথম আলো বিএমডিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। যাচাই-বাছাই করে বিএমডিসির কর্মকর্তারা যে তথ্য দেন তাতে দেখা যায়, প্রথম আলো সংগৃহীত নামপত্রগুলোর প্রায় ৩৩ শতাংশে অস্বীকৃত ডিগ্রি বা পদবি ব্যবহূত হচ্ছে। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কেউ কেউ গবেষণা বা থিসিস বা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তথ্যও নামপত্রে ব্যবহার করছেন। বিএমডিসি বলছে, আইনে এটা অপরাধ।
তবে অস্বীকৃত ডিগ্রি ব্যবহারকারী চিকিৎসকদের অনেকেই প্রথম আলোকে বলেছেন, বিএমডিসির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তাঁরা জানেন না, কোন ডিগ্রিটি লিখতে পারবেন আর কোনটি পারবেন না।
চিকিৎসকেরা কী বলেন: রাজধানীর একটি বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতালের অধ্যাপক নামফলকে নিজের নামের পাশে লিখেছেন, এফএসিএস (আমেরিকা), ফেলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (আমেরিকা, থাইল্যান্ড ও ভারত)। বিএমডিসি বলছে, এসব ফেলোশিপ নামের সঙ্গে লেখা যাবে না। ওই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি তো একা না, সবাই এটা ব্যবহার করছে।’
চেম্বারে রোগী দেখেন এমন একজন চিকিৎসক নামের পাশে লিখেছেন, শিমিজু ফেলো, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফেলো। বিএমডিসি বলছে, এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আমি যে ফেলোগুলো উল্লেখ করেছি, এগুলো সরকারের স্বীকৃত। সবগুলো সনদ আমার কাছে আছে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া এসব ফেলোশিপ করা সম্ভব না। তবে আমার ঠিক জানা নেই, এগুলো ব্যবহার করা যায় কি না।’
ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেন এমন একজন চিকিৎসক এফসিপিএস, এআরএফ ডিগ্রির পাশাপাশি নামপত্রে এফআরএফ (ভারত) লিখেছেন। বিএমডিসি বলছে, এর কোনো স্বীকৃতি নেই। এটা তিনি লিখতে পারেন না।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলেন, আইনে এফআরএফের স্বীকৃতি আছে কি না, তিনি জানেন না। উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমি ভারতে গিয়ে এক বছর ফেলোশিপ করেছি। এখন কেন এটা লিখব না?’
নামপত্রে একজন চিকিৎসক লিখেছেন, হাড় জোড়া বিশেষজ্ঞ, ট্রমা সার্জন, বিসিএস (সার্জন)। বিএমডিসি বলেছে, এসব লেখা যায় না। আরেকজন চিকিৎসক লিখেছেন, এমডি (ডর্মাটোলজি) থিসিস। পাস করার আগেই কেন ডিগ্রি ব্যবহার করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি থিসিস করছি, সেটা লিখেছি। মিথ্যা তো লিখিনি।’
এ রকম অনেকেই নামের সঙ্গে যথেচ্ছ ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। তবে অস্বীকৃত ডিগ্রি বা পদবি ব্যবহারকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিএমডিসি কোনোদিন ব্যবস্থা নেয়নি। এ বি এম আবদুল্লাহ মনে করেন, প্রতারণার হাত থেকে রোগীদের বাঁচাতে বিএমডিসিকে এগিয়ে আসা উচিত।
এ ব্যাপারে আবু সফি আহমেদ আমিন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। বিএমডিসির পক্ষ থেকে খুব শিগগির আইনের ধারা উল্লেখ করা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তিনি বলেন, ‘অস্বীকৃত ডিগ্রি ব্যবহার না করার জন্য আমরা চিকিৎসকদের অনুরোধ জানাব। এক বা দুই মাসের সময়সীমা বেঁধে দেব।’ বিএমডিসির সভাপতি মনে করেন, নির্দিষ্ট সময়সীমার পর কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons