রবিবার, ১২ জুন, ২০১১

মেঝেতে প্রসূতি মা ও নবজাতক


undefined
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নবজাতক ও প্রসূতিদের দুরবস্থার এই ছবিটি বুধবার রাতে তোলা
আলীমুজ্জামান

২৫০ শয্যার ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। শয্যার অভাবে রোগীদের থাকতে হচ্ছে মেঝেতে। ৮ জুন রাত ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রসুতি মা ও নবজাতকেরা চরম অবহেলায় মেঝেতে শুয়ে আছে।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ২ নম্বর ব্যাপারীডাঙ্গি গ্রামের লুৎফার মিয়া জানান, ৪ জুন তাঁর নাতি হয়েছে। ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় করিডোরের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।
ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর এলাকার রুপা আক্তার বলেন, ‘আমার প্রথম সন্তান হয়েছে ৭ জুন। সেদিন থেকেই এ মেঝেতেই পড়ে আছি। মানুষের হাঁটাচলা আর ট্রলির শব্দে রাতেও ঘুমাতে পারি না।’
মধুখালীর মাঝকান্দি এলাকার জাহানারা বেগম বলেন, ‘৮ জুন সকাল ১০টায় সিজারের মাধ্যমে আমার নাতি হয়েছে।’ মা শিউলী বেগম জানান, এটি তাঁর প্রথম বাচ্চা। লজ্জাশরম ত্যাগ করে উন্মুুক্ত এ পরিবেশেই শিশুকে দুধ পান করাতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে লেবার ওয়ার্ড-২-এর ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স তাহেরা খানম বলেন, এ ওয়ার্ডে বেড আছে মাত্র ২৩টি, কিন্তু প্রতিদিন রোগী থাকে ৫৫ থেকে ৭০ জন। এ জন্য প্রসুতিদের নবজাতকসহ বাইরের করিডোরে বা বারান্দার লনে মেঝেতে রাখা হচ্ছে।
নবজাতকসহ প্রসুতিকে মেঝেতে ফেলে রাখা কতটা সংগত হচ্ছে, এ নিয়ে সহকারী অধ্যাপক জেবুন্নেসা পারভীন বলেন, মেঝেতে ফেলে রাখার জন্য প্রসুতির সেলাইয়ের জায়গায়, নবজাত শিশুটির নাভিমূলসহ বিভিন্ন জায়গায় ইনফেকশন হতে পারে।
অপর সহকারী অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা জানান, মেঝেতে থাকা প্রসুতি ও নবজাতকের জন্য ইনফেকশনের ঝুঁকি সব সময়ের জন্যই থাকবে।
বাংলাদেশ লিগাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের ফরিদপুরের সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্ব্বামী বলেন, প্রসুতি মা ও সদ্য প্রসুত শিশুকে এভাবে অবহেলা, অযত্ন ও নোংরা পরিবেশে ফেলে রাখলে তা উভয়ের জন্যই জীবন আশঙ্কার কারণ হতে পারে। ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন বলেন, এ পরিস্থিতি হাসপাতাল, চিকিৎসক ও সমাজের জন্য সুখকর নয়।
ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু আহমেদ জুলফিকার হায়দার বলেন, ‘ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। প্রসুতি ও শিশুদের জন্য আমাদের হাসপাতালে অতিরিক্ত জায়গা নেই। অবকাঠামো বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত এ সমস্যা সমাধানের কোনো বিকল্প আমার জানা নেই।’

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons