শিক্ষক পদে ১৫২ প্রার্থীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভুয়া
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করা এক হাজার ৩৩৮ জনের মধ্যে ১৫২ জনের সনদই ভুয়া। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তার অবসরের বয়স দুই বছর বাড়ানোর পর অনেকেই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আবেদন করেন। এ রকম আবেদনকারী ২৫ জন পদস্থ কর্মকর্তার সনদ সন্দেহজনক চিহ্নিত করে তা যাচাই করা হচ্ছে।
ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রযোজ্য রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়া সাত হাজার জনের সনদও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর জাল করেও কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর তদন্ত এবং যাচাই-বাছাইয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স বাড়ানো-সম্পর্কিত সারসংক্ষেপ অনুমোদনকালে সনদ যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। সারসংক্ষেপের একাংশে তিনি উল্লেখ করেন, মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেড় হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগেও একই অবস্থা হয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রযোজ্য রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়া সাত হাজার জনের সনদও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর জাল করেও কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর তদন্ত এবং যাচাই-বাছাইয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স বাড়ানো-সম্পর্কিত সারসংক্ষেপ অনুমোদনকালে সনদ যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। সারসংক্ষেপের একাংশে তিনি উল্লেখ করেন, মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেড় হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগেও একই অবস্থা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (এনএসআই) এ নিয়ে তদন্ত এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শুরু করে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। মুক্তিবার্তা এবং বিভিন্ন সময়ে গেজেটে (এ পর্যন্ত চারটি) প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধার কোনো তালিকায় নাম না থাকলেও সনদ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের সনদও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন এক লাখ ৩০ হাজার প্রার্থী। এঁদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করেন এক হাজার ৩৩৮ জন। এঁদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও হয়ে গেছে। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের কারণে এখনো ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে না।
গোয়েন্দা সংস্থা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং উপজেলা, জেলা ও মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ও জাতীয় মুুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তদন্ত, যাচাই-বাছাই শেষে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ১৫২ জনের সনদ সঠিক নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ১৫২ জনের মধ্যে ২৯ জনের সনদ ভুয়া, ১৩ জনের উপযুক্ত সনদ নেই, ১৮ জনের সনদ যাচাইয়ের উপযুক্ত নয়, ৪১ জনের সনদ গ্রহণযোগ্য নয় এবং ৫১ জনের সনদ নিবন্ধন তালিকাভুক্ত নয়। তবে অপরিচ্ছন্ন থাকায় যে ১৮ জনের সনদ যাচাই সম্ভব হয়নি, তাঁরা আবার কাগজপত্র দাখিল করতে পারবেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, খাদ্যসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদনকারী মোট ২০ হাজার ৫৭০ জনের সনদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নিবন্ধন বইয়ে লিপিবদ্ধ নেই, এমন কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা মুক্তিযোদ্ধার সনদ চাকরির ক্ষেত্রে সংযুক্ত করছেন। সারসংক্ষেপে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, কিছু ব্যক্তি প্রযুক্তি অপপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর জাল করে অবৈধ সুযোগ নিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য কমপক্ষে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। তবে আইনগতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা প্রশাসনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা-সম্পর্কিত তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করতে পারে।
জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। সবার কাছ থেকে এখনো তালিকা পাওয়া যায়নি। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দুই দফা তাগিদ দিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি।
সচিব বলেন, মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রযোজ্য রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়া সাত হাজার ব্যক্তি তাঁদের সনদ নবায়নের আবেদন করেছেন। মুক্তিবার্তা বা চারটি গেজেটের কোনোটিতে তাঁদের নাম নেই। তাই এগুলো সরকার-নির্ধারিত পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করা হবে।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভিন্ন সিভিল সার্জন কার্যালয় ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্থায়ী চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিউনিটি হেলথ প্রকল্পে ১৩ হাজার ৫০০ জনবল নিয়োগের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
স্বাস্থ্যসচিব হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠি তাঁরা পেয়েছেন। এখন যাচাই-বাছাই চলছে। তবে সনদ না দেখে কাউকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার সুযোগ কম। তার পরও জাল সনদ নিয়ে কেউ চাকরি নিয়েছেন কি না, তা দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা-সম্পর্কিত তথ্যাদি তদন্ত করতে এনএসআইয়ের কাছে পাঠিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবসরের বয়স বাড়ানোর জন্য আবেদন করা কর্মকর্তাদের মধ্যে যে ২৫ জনের সনদ সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, তিনি তাঁদের একজন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত বৃহস্পতিবার সওজের প্রধান প্রকৌশলীর মুঠোফোনে দুই দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই না করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে কেউ নিয়োগ পেয়ে থাকলে তাঁর সনদ যদি ভুয়া প্রমাণিত হয়, তবে তাঁর নিয়োগ বাতিল করা হবে। তবে সওজের প্রধান প্রকৌশলীর সনদ গোয়েন্দা সংস্থা পরীক্ষা করছে কি না, তা তিনি জানেন না।
অপর যে ২৩ জনের সনদ সন্দেহজনক বলে যাচাই-বাছাই চলছে তাঁরা হলেন: পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী; অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুজন ঊর্ধ্বতন মুখ্য কর্মকর্তা, মুখ্য কর্মকর্তা, অ্যাপ্রেইজার, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এক্সাইজ ও ভ্যাট টঙ্গী সার্কেল, একজন ফোরম্যান; ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (সমন্বয়); প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চিফ ইনস্ট্রাক্টর; দুজন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক; বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী; একজন উপজেলা প্রকৌশলী; একজন সহযোগী অধ্যাপক; একজন প্রধান শিক্ষক; খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের একজন উপপরিচালক; একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের হিসাব সহকারী, পরিবহনচালক; যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পার্সেল সহকারী, বুকিং সহকারী, একজন ওয়েম্যান ও উচ্চমান সহকারী; স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক।
কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন যাঁদের চাকরি হয় তার বেশির ভাগই হয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা সাংসদদের চাহিদা অনুযায়ী (ডিও)। তাঁরা যাঁদের নাম লিখিতভাবে সুপারিশ করেন, এর বাইরে নিয়োগ দেওয়ার খুব বেশি সুযোগ থাকে না।
জানা যায়, পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে উপপরিদর্শক (এসআই) পর্যন্ত নিয়োগ সাংসদদের তালিকা অনুযায়ী করা হয়। সেখানে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।




১:৫৮ PM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন