নিজের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে অতৃপ্তিতে ভোগে এমন মানুষ কি আছে? একজন পুরুষ হাসিমুখে নিজেকে পুরুষ হিসেবে পরিচয় দেয়, একজন নারীও নিজেকে নারী বলতে কুণ্ঠাবোধ করে না। পুরুষ নিজের পৌরুষে উদ্দীপ্ত আর নারী স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। কেউই নিজের লৈঙ্গিক পরিচয়ে বিব্রত বা বিষণ্ন হয়ে নিয়তিকে দোষারোপ করে না।
তবে ইংল্যান্ডের অ্যাডেলে মার্কহ্যামের বেলায় ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। অ্যাডেলের বয়স এখন ৩১। সুন্দর, সুগঠিত শরীরের পূর্ণাঙ্গ যুবতী। শিগগিরই বিয়েশাদী করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন তার চোখে। কিন্তু গত ২৮ বছর ধরে অ্যাডেলে পরিচিত হয়ে এসেছেন ম্যাথু মার্কহ্যাম হিসেবে। একজন টগবগে যুবক হিসেবে সবাই চিনত তাকে। কিন্তু ওই যুবক ম্যাথুই এখন তন্বী-তরুণী। একটা জটিল অপারেশন তার আসল লৈঙ্গিক পরিচয় উদ্ঘাটন করে দিয়েছে। আর তিনি যে পুরুষ নন, এটা তার বাবা-মার বুঝতে সময় লেগেছে কমপক্ষে ২০ বছর!
বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই নিজের লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলেন অ্যাডেলে। পরিবারের চাপ ছিল তার ওপর একজন পুরুষ মানুষ হিসেবে স্বভাবসুলভ আচরণ করার জন্য। কিন্তু অ্যাডেলে মানে ম্যাথু বুঝতে পারতেন না তিনি আসলেই পুরুষ কিনা। ওদিকে চিকিত্সকরাও পরিবারকে বলে দিয়েছিলেন, ম্যাথু স্বাভাবিক পুরুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারছে না। ওর মধ্যে কিছু একটা সমস্যা রয়েছে। অ্যাডেলে বলেন, ‘বাবা-মা আমাকে সারাক্ষণ বকাঝকা করতেন একজন পুরুষ বা বেটাছেলের মতো আচরণ করছি না বলে। তারা আমাকে ছেলেদের মতো ফুটবল খেলতে বলতেন। কিন্তু আমার ইচ্ছে হতো মাঠে ফুটবল খেলতে না গিয়ে আমার বোনদের সঙ্গে বসে পুতুল নিয়ে খেলতে।’
বাচ্চা বয়স থেকেই মেয়েদের মতো রিনরিনে কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন ‘বালক’ ম্যাথু। চালচলন আর ভাবভঙ্গিও ছিল বালিকাদের মতোই। খেলতেও চাইতেন বালিকাদের সঙ্গে। তাতে বাবা-মা মাঝেমধ্যে ক্ষেপে গিয়ে বলতেন, ‘তুমি কিন্তু খুব বেশি মেয়েলি আচরণ করছ। একজন ছেলেকে এটা মানায় না।’ কিন্তু অ্যাডেলের কথা হলো, ‘আমি কি করব? আমি তো নিজেকে মেয়ে ভাবতেই স্বস্তিবোধ করতাম।’
ম্যাথু ওরফে অ্যাডেলে যে সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন, তার নাম ক্লাইনফেল্টার’স সিনড্রোম। ক্লাইনফেল্টার’স সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুরা শরীরে বহন করে একটা অতিরিক্ত সেক্সুয়াল জিন। সুতরাং ছেলেরা যেখানে সাধারণত ‘ঢণ্থ জিন আর মেয়েরা ‘ঢঢ্থ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, সেখানে অ্যাডেলা জন্মেছিলেন ‘ঢঢণ্থ জিন নিয়ে। ফলে ‘ণ’ এর আধিক্যের কারণে তার লিঙ্গ নিয়ে শুরু হয়েছিল এই বিভ্রান্তি। এক্ষেত্রে কোনো জাতক বড় হয়ে পুরুষ হয়েই জীবন কাটায়, আবার কেউ কেউ অ্যাডেলের মতো মেয়ে হয়ে যায়।
অ্যাডেলে বলেন, ‘আমি আমার বোনদের সঙ্গে বেশি মিশতাম, তাদের সঙ্গে খেলতাম, তাদের পোশাক পরতে চাইতাম। এটা আমার বাবার কাছে বিরক্তিকর ঠেকত। অনেক সময় ধরা পড়ে মারধরও খেয়েছি। কিন্তু আমি শোধরাতে পারতাম না। আমি তো নিজেকে মেয়ে ভাবতেই ভালোবাসতাম।’
১৪ বছর বয়সেও অ্যাডেলের মধ্যে কোনো পরিবর্তন না দেখে উদ্বিগ্ন বাবা-মা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। চিকিত্সক ব্যবস্থাপত্র দিলেন টেস্টোস্ট্রেন সেবনের জন্য। বললেন, এটাই তাকে পরিপূর্ণ পুরুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। টেস্টোস্ট্রেন একটা পুরুষ হরমোন বৃদ্ধিকারী ওষুধ। অ্যাডলে ওরফে ম্যাথু এটা নিয়মিত সেবন করতে লাগলেন।
কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালে যখন পুরুষের গলার স্বর পাল্টে ভরাট হয়ে যায় আর মুখে দাড়ি-গোঁফ গজাতে শুরু করে, তখনও তার মধ্যে এসব পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেল না। বুকটা কিন্তু মেয়েদের মতোই ভরাট হয়ে উঠতে শুরু করল। উপায়ান্তর না দেখে ফের ডাক্তারের কাছে নেয়া হলো তাকে।
২৮ বছর বয়সে ম্যাথু শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শমত অপারেশনের মাধ্যমে নিজেকে নারীতে রূপান্তরিত করলেন। ম্যাথু তাই এখন অ্যাডেলে মার্কহ্যাম। শিগগিরই তিনি এখন একটা ছেলেকে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করতে চান। দ্য মেইল




৫:৩৪ PM
নামহীন

Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন