সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১১

প্রেমের ফাঁদে কিশোরীরা, শঙ্কায় অভিভাবকেরা

ভোলায় বেশ কয়েকজন কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করে সিডি করা ও মুঠোফোনে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণ-তরুণীদের শতাধিক মুঠোফোন জব্দ করেছেন। তাঁদের দাবি, মূল হোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ধরনের অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ভোলার সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভোলার সাতটি উপজেলায় তথাকথিত প্রেমিক সেজে তাদের প্রেমিকাকে যৌন হয়রানি করছে। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন অশ্লীল চিত্র মুঠোফোনে ও ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে বাজারে ছাড়ছে। ওই ভিডিওচিত্র ভোলার দুই শতাধিক কম্পিউটার ব্যবসায়ী উচ্চ দরে বিক্রি করছে। পুলিশের তথ্যমতে, গত চার মাসে এ ধরনের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা হয়েছে।
সম্প্রতি ভোলা শহরের একটি স্কুলের ছাত্রীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অশ্লীল দৃশ্য গোপনে ক্যামেরাবন্দী করে সিডি বানিয়ে বাজারে ছেড়েছে এক বখাটে চক্র। এ ঘটনায় ৭ জুলাই ভোলা সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ভোলা জেলার সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির সামাজিক দায়িত্ব এ ধরনের অন্যায়ের প্রতিরোধ করা। এ ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের সবার ঘরে ঘটতে পারে। সমাজে এ ধরনের অশ্লীলতা প্রশ্রয় পাবে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব, যাদের কম্পিউটারে, মুঠোফোনে, ভিসিডিতে এ ধরনের দৃশ্য থাকবে, তাদের আইনের আওতায় আনবেন।’
ভোলা আবৃত্তি সংসদের সভাপতি সামস উল আলম বলেন, ‘সমস্যাটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ যে তারা ১৮ বছরের কম বয়সীদের মুঠোফোন জব্দ করছে। আর তরুণদের কাছে আমার অনুরোধ, ওই অশালীন ভিডিওচিত্রটি নিজের বোনের মনে করে মুঠোফোন থেকে ফেলে দিন!’
শাহাবাজপুর থিয়েটারের পরিচালক এস এম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘যারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। কম্পিউটারের দোকানের ব্যবসাও অনুমোদনের (লাইসেন্স) আওতায় আনা দরকার।’
জেলা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলছাত্রীকে এভাবে যৌন নিপীড়ন চালানো এবং সে দৃশ্য ভিডিও করে বাজারে ছাড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে শঙ্কা-ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ ভোলা শহরে ব্যাপক তদন্ত চালায়। দেখা গেছে, জেলা শহরের কালীনাথ রায়ের বাজার এলাকার দরগা রোডের বাসিন্দা মো. হাসান এ ঘটনার মূল হোতা। গত বুধবার রাতে ডিবি পুলিশ বাসায় হানা দিয়ে হাসানের বাবা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে আটক করে। এ সময় বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় হাসানের ব্যবহূত কম্পিউটারসহ একাধিক স্কুলছাত্রীর অশ্লীল ভিসিডি, মেমোরি কার্ড ও সাতটি মুঠোফোনের সিম। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি পুলিশ শহরতলির পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পাঙ্গাসিয়া লঞ্চঘাট থেকে হাসানকে গ্রেপ্তার করে।
হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সঙ্গে তার বন্ধুরাও আছে। তার তথ্যের সূত্র ধরেই শুক্রবার তার বন্ধু সাইফুল ইসলাম সৌধকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অশ্লীল সিডি বিক্রির অভিযোগে শনিবার দিবাগত রাতে তিনটি কম্পিউটার সিপিইউসহ তিন ব্যবসায়ী আজিজ, রুবেল ও মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ বলছে, প্রথম সতর্কতায় যদি কেউ ওই চিত্র মুছে না ফেলে, তবে পরবর্তী সময়ে কারও মুঠোফোন ও কম্পিউটারে অশ্লীল চিত্র পেলেই তাকে সংশ্লিষ্ট মামলার আসামি করা হবে।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘মুঠোফোনের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের বাবা-মা সন্তানের হাত থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ জন্য অভিযান চালিয়ে ১৮ বছরের নিচের তরুণ-তরুণীর হাত থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে অভিভাবককে ফেরত দিচ্ছি।’ এ পর্যন্ত তাঁরা ভোলা শহর থেকে শতাধিক মুঠোফোন জব্দ করেছেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons