সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১১

খুনের পর আদিবাসী নারীর লাশ গাছে বেঁধে রাখা হলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সিমলা দীঘিপাড়া গ্রাম থেকে গতকাল রোববার সকালে বিবস্ত্র অবস্থায় গাছে বেঁধে রাখা আদিবাসী নারী মরিয়ম মুর্মুর (৫৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা তাঁর লাশ গাছে বেঁধে রাখে।
মরিয়ম মুর্মু গোদাগাড়ীর সিমলা দীঘিপাড়া গ্রামের একটি বয়স্ক শিক্ষা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এ ছাড়া আদিবাসী পরিচালিত একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর স্বামীর বাড়ি তানোর উপজেলার কমলা ইউনিয়নের চৈতপুর গ্রামে। ২০০৩ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে গোদাগাড়ীতে বাবা রাজেন মুর্মুর বাড়িতেই ছিলেন তিনি।
এলাকাবাসী জানান, রাজেন মুর্মুর বাড়ির সামনে বাঁশঝাড়ের ভেতরে থাকা একটি বরইগাছের সঙ্গে মরিয়মের লাশ গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় ঝোলানো ছিল। লাশটি ছিল বিবস্ত্র। শরীর থেকে ঝরছিল রক্ত। গতকাল ভোর ছয়টার দিকে গ্রামের অঞ্জলী মুর্মু প্রথমে লাশটি দেখতে পান। পরে তাঁর চিৎ কারে আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে লাশটি কাপড়ে ঢেকে থানায় খবর দেন।
স্থানীয়রা বলেন, রাজেন মুর্মুর মাটির তৈরি দোতলা বাড়ির প্রধান দুটি দরজা সকালে খোলা পাওয়া গেছে। বাড়ির আলমারি ও ট্রাঙ্ক ছিল খোলা। এর মধ্যে থাকা কাগজপত্র, জামা-কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী বলেন, রাজেন মুর্মু একজন সাবেক জরিপকারী (সার্ভেয়ার)। তিনি তাঁর বৃদ্ধ স্ত্রী ও বিধবা মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। তাঁর অন্য চার মেয়ে ও এক ছেলে থাকেন বাইরে। মরিয়মের একমাত্র ছেলেও চাকরির সুবাদে বাইরে থাকেন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে নওগাঁর নজিপুরে।
প্রতিবেশীরা বলেন, রাজেন মুর্মু খুবই অসুস্থ। ঠিকমতো চোখে দেখতে পান না। কানেও কম শোনেন। তাঁর স্ত্রীর অবস্থাও ভালো নয়। তাই তাঁরা বাড়িতে থাকলেও ঘটনার কিছুই টের পাননি।
মরিয়মের খালাতো ভাই আন্দ্রিয়াস মুর্মু বলেন, প্রতিদিনের মতো মরিয়ম শনিবার রাতেও বাড়ির বারান্দাতেই ঘুমিয়ে ছিলেন। কিন্তু রাতে দুষ্কৃতকারীরা তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে হত্যা করেছে।
মরিয়মের ছেলে উইলসন (৩২) বলেন, তাঁর মাকে কে বা কারা আগে থেকেই মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। কিন্তু তাঁর মা কারও নাম বলতেন না। তবে তিনি বলেন, জমি নিয়ে চাচার সঙ্গে তাঁদের ঝগড়া চলছে। এর বাইরে কারও সঙ্গে তাঁদের শত্রুতা নেই।
গতকাল রাজেন মুর্মুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় পড়ে তিনি কাঁদছেন। তিনি এতটাই অসুস্থ যে উঠে মেয়ের লাশের কাছেও যেতে পারছেন না। তাঁর স্ত্রী মেয়ের লাশের পাশে বসে কাঁদছেন।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সদর (সার্কেল) বেলায়েত হোসেন, গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকিরুল ইসলাম ও পরিদর্শক (তদন্ত) রেজাউল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। লাশ গাছের সঙ্গে বাঁধা থাকলেও পা ছিল মাটিতে। দুই হাত ছিল পিছমোড়া করে বাঁধা। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
ওসি বলেন, নিহত মরিয়মের যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত ঝরছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় মরিয়মের ছেলে বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সংস্থা ও আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে কাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজশাহী সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
প্রথম আলো

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons