শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১১

 ভোলায় সাত দিনে ৩০০ ঘরবাড়ি বিলীন

এক সপ্তাহ আগেও এখানে বসতি ছিল। সেই বসতি এখন মেঘনার পেটে। একদিকে নদী ভাঙছে, অন্যদিকে অমাবস্যা-পূর�

এক সপ্তাহ আগেও এখানে বসতি ছিল। সেই বসতি এখন মেঘনার পেটে। একদিকে নদী ভাঙছে, অন্যদিকে অমাবস্যা-পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ার আঘাত হানছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে। ছবিটি মঙ্গলবার ধনিয়ার বালিয়াকান্দি এলাকা থেকে তোলা

প্রথম আলো

ঘন ঘন অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলা শহরসহ চারটি ইউনিয়ন রক্ষায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ায় বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে মেঘনার ভাঙনে তিন শতাধিক বাড়িঘর ও বাঁধের বাইরের কয়েক শ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। এ মুহূর্তে বাঁধ সংস্কার ও বাঁধের পাশে ব্লক ফেলে ভাঙন প্রতিরোধসহ তীর সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বাঁধের বিভিন্ন অংশ ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকার দফাদারবাড়ি থেকে কাচিয়া হয়ে পূর্ব ইলিশা সোনাডুগির বিল পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার এলাকা ভাঙনকবলিত। ধনিয়া ইউনিয়নে বাঁধের যেকোনো অংশ ভেঙে গেলে ভোলা শহরের অনেকাংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। কাচিয়া ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের যেকোনো অংশে বাঁধ ভেঙে গেলে কাচিয়া, বাপ্তা, পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের লোকালয় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
গত রবি, সোম ও মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘনার ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ধনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বালিয়াকান্দি এলাকায় গত এক সপ্তাহে ২০০ ফুট জমি ভেঙে নদী ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ওই এলাকার ভাঙনকবলিত নিজাম, সেলিম, নুর ইসলাম, ফারুক বাঘা, আবুল কাশেম জানান, বর্ষার শুরুতে নতুন বাঁধ থেকে নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় ৩০০ ফুট। ইতিমধ্যে বালিয়াকান্দির ফরাজিবাড়ি, কাজীবাড়ি, বাঘাবাড়ি, হারুন মাঝির বাড়িসহ দুই শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বালিয়াকান্দি ভূমিহীনদের ব্যারাক হাউস ভাঙনের মুখে পড়েছে।
গত রোববার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কালু মিয়ার হাট, আজাহার পণ্ডিতের বাড়ি, মিজিবাড়ি, নাদের মিয়ার হাটসহ সোনাডুগির বিল এলাকা ভাঙনকবলিত। গত কয়েক দিনে এসব এলাকার মিজিবাড়ি, মহুরিবাড়ি, জমাদ্দারবাড়ি, হাওলাদারবাড়ি, ভূঁইয়াবাড়ি, সারেংবাড়িসহ শতাধিক বাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে।
ভূঁইয়াবাড়ির কামাল ভূঁইয়া জানান, একেকটি বাড়িতে ২০-৪০টি পরিবার বসবাস করত। তারা ভাঙনের শিকার হয়ে আজ বিভিন্ন এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত অহিদুর রহমান, শাজাহান, সফিকুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন জমাদ্দার জানান, মেঘনার ভাঙনে বাঁধের বাইরের জমি বিলীন হয়ে নদী এখন বাঁধের কাছে এসে পড়েছে। প্রতি মাসে দুটি অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় অস্বাভাবিক জোয়ার হয়। তখন নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ে বাঁধের গায়ে।
ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্ব ইলিশা, কাচিয়া ও ধনিয়ার অন্তত ২০টি স্থানে ঢেউ আছড়ে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার না করলে তা ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে পারে। তখন খেতের পাকা আউশ ধানের ক্ষতি হবে। স্থানীয় লোকজন জানায়, গত এক সপ্তাহে ধনিয়া-কাচিয়া ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন চার শতাধিক বাড়িঘর ও তাদের জমিজমা হারিয়েছে।
ভোলা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ধনিয়া থেকে পূর্ব ইলিশা পর্যন্ত ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাউবো গত ১০ বছরে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ করে কমপক্ষে ১০-১২ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু ভাঙন ঠেকাতে পারেনি।
ভোলা জেলা পাউবো-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি ও ভোলা শহর হুমকির মুখে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ভোলাকে রক্ষা করতে হলে ওই আট কিলোমিটার বাঁধে দ্রুত ব্লক ফেলতে হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ১৮২ কোটি টাকা। আপাতত এটি হলে ভোলা শহর ও চারটি ইউনিয়নের কৃষিজমি, লোকালয় রক্ষা পাবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons