
বাবার কোলে শিশু আফিজা, পাশে মা
ছবি: প্রথম আলো
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা থানার নর্দায় শহীদ হারেস সড়কের একটি বাসায় এই মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাড়িটির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে। নিহত দুজন হলো মা সারজিনা আক্তার (২৮) ও তাঁর দেড় বছরের মেয়ে আনিফা।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলেছে, মনে করা হচ্ছে স্বামী আনিসুর রহমানের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে শিশুটিকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন সারজিনা আক্তার। স্বামী আনিসুর বিদেশে পাঠানোর কথা বলে বেশ কয়েকজনের কাছে টাকা নিয়েছিলেন। তবে তাঁদের আর বিদেশে পাঠাননি, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। পাওনাদারদের কারণে আনিসুর বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকতেন না। আর পাওনাদারেরা এসে টাকা ফেরতের জন্য সারজিনাকে চাপ দিতেন, অপমান করতেন। এসব সইতে না পেরেই শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার পর আনিসুর রহমানকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সারজিনার ফ্ল্যাটের কাছেই তাঁর বাবার বাড়ি। তাঁর বাবা শফিকুল ইসলাম একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার গাড়িচালক। শফিকুলের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সারজিনা বড়। তিনি ২০০৩ সালে তিতুমীর কলেজ থেকে বিকম পাস করেন।
ছোট বোন মৌসুমি আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে পরিবারের অমতে আদালতে গিয়ে বিয়ে করেন সারজিনা ও আনিসুর। বিয়ের সময় আনিসুর বলেছিলেন, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। কয়েক দিন পরে আনিসুর বলেন, তাঁর চাকরি চলে গেছে। তিনি এখন জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা করেন।
মৌসুমি আক্তার বলেন, তাঁরা মনে করেন আনিসুর আসলে প্রতারক। বিদেশে পাঠানোর নামে লোকের টাকা নিয়ে মেরে দেওয়াই তাঁর পেশা। পাওনাদারদের দুর্ব্যবহার নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলছিল অনেক দিন ধরে।
সারজিনার বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়ের সুখের জন্য তিনি সব সময় তাঁদের খোঁজ রাখতেন, সাহায্য করতেন। আনিসুর বেকার ছিলেন বলে নাতনির দুধ কেনার টাকাও তিনি দিতেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার লুৎফুল কবির একই ধরনের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে জানান, তিন-চার দিন ধরে বাসায় ছিলেন না আনিস। দিনের পর দিন মানসিক চাপে থাকা গৃহবধূ সারজিনা শিশুকন্যাকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে।
সারজিনার বোন মৌসুমি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল সকালে আনিসুর তাঁকে ফোন করে বলেন, সারজিনা অনেকক্ষণ ধরে ফোন ধরছে না। এ খবর পেয়ে বাবা শফিকুল ইসলাম সারজিনার বাসায় যান। দীর্ঘক্ষণ দরজা ধাক্কানোর পরও কেউ খুলছিল না। এরপর তিনি বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানালে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন।
বাড়ির মালিক লোকমান হোসেন জানান, সারজিনা ও আনিস দম্পতি ছয় মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। তাঁদের কলহের বিষয়টি সবাই জানত।
বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক আবু আজিজ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে দুটি লাশ দেখতে পায়। শিশুটির লাশ ছিল বিছানার ওপরে আর সারজিনার লাশ ছিল ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে দরজা ভালোভাবে লাগানো ছিল। ঝুলন্ত মৃতদেহটির নিচেই পড়ে ছিল একটি চেয়ার। কয়েক দিন ধরে ওই বাসায় আর কেউ ছিল না। এসব দেখে মনে হয়, বিষয়টি আত্মহত্যা। বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে।
এ বিষয়ে গতকাল রাতে সারজিনার ভাই সেবাস্তানি সাবু বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা করেছেন। মামলায় আনিসুরকে আসামি করা হয়েছে।
প্রথম আলো




১২:১৩ PM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন