শনিবার, ২ জুলাই, ২০১১

জলবৎ তরলং

undefined



মানুষকে শূন্যে ভাসানো, লটারির টিকিটকে নগদ টাকায় রূপান্তর, তুষারকণা থেকে হীরা তৈরির মতো অদ্ভুত সব জাদু দেখাতে ওস্তাদ ডায়নামো। সম্প্রতি পানির ওপর হেঁটেছেন তিনি। এ কাজটি এত সহজভাবে করলেন, যেন এটি জলবৎ তরলং। এই অসাধারণ জাদুকরকে নিয়ে প্রধান ফিচার। লিখেছেন ওমর শাহেদ
২৮ বছরের যুবক স্টিভেন ফ্রেইনি। জন্ম তাঁর ইংল্যান্ডের ব্রেডফোর্ডে। উত্তর ইংল্যান্ডের এই অঞ্চলটি দারিদ্র্যপীড়িত। এখানেই এমন এক পরিবারে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন, যার কর্তা বছরের বেশির ভাগ সময়ই জেলখানায় বন্দি থাকেন। তাঁদের চার ভাইবোনের জীবনে তেমন কোনো গল্প নেই। ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড় এই ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই রোগাক্রান্ত। এখনো তাঁকে দিনে চারটি ট্যাবলেট খেতে হয়। এই দুঃখময় জীবনে স্টিভেনের একমাত্র ভালোবাসা ছিল জাদু। জাদুর প্রতি এই ভালোবাসার জন্ম দিয়েছিলেন তাঁর দাদা। তিনি তাস খেলার একটি জাদু দেখিয়ে পুরোপুরি মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন নাতিকে। দাদার কাছ থেকে এই বিদ্যা শিখে নেওয়ার পর জীবনের অন্য রকম আনন্দের দেখা পেয়ে স্টিভেন এটা নিয়েই সারাক্ষণ পড়ে থাকতেন। রাস্তায় চলাফেরার সময়ও হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেন জাদুকরদের কারসাজি দেখার জন্য। আস্তে আস্তে জাদু নিয়েই ভবিষ্যৎ জীবন কাটিয়ে দেওয়ার সংকল্প করেন তিনি। নতুন করে জাদুকে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় করার ভাবনা শুরু করেন। নাচ শেখেন, হিপহপ গান শেখেন। আর এ দুটোকেই তাঁর জাদুবিদ্যার অপরিহার্য দিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এতে দর্শকদের আকর্ষণও বেড়ে যায় বলে মনে করেন তিনি।
দিনে দিনে তাঁর নাম ছড়িয়ে যেতে থাকে চারদিকে। আর তিনিও ডায়নামো নাম নিয়ে নতুন পরিচয়ে জাদুর আলো চারদিকে ছড়িয়ে দিতে থাকেন। অধ্যবসায়ের ফলও তিনি পেয়েছেন। যে ছেলেটিকে ২০ বছর বয়সেও বন্ধুর সোফায় ঘুমাতে হতো, এখন তাঁর ভক্ত অনেক, এমনকি তারকাদের সঙ্গেও দারুণ খাতির তাঁর। হলিউড তারকা গিনেথ প্যালট্রো, ব্রিটেনের বিখ্যাত র‌্যাপার মাইক স্নিকার, এমনকি ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লসও তাঁর ভক্ত। তবে সব সময়ই বিস্ময়কর কিছু দেখানোর দারুণ ঝোঁক ডায়নামোর। আর্সেনালের এমিরেটস স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের সামনে লিটল ব্রিটেনখ্যাত তারকা ম্যাট লুকাসকে শূন্যে ভাসিয়ে দেন। বিবিসির একটি লাইভ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে স্বাক্ষর দেওয়া লটারিকে নগদ টাকায় রূপান্তর করেন। স্পোর্টস রিলিফ নামের সেই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন রবি উইলিয়ামসের মতো সংগীত তারকা। এভাবেই দিন দিন নিজের ভক্ত ও অনুরাগীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন ডায়নামো [এই নামের অর্থ আসলে অসাধ্য] নামের এই অসাধারণ প্রতিভা। তাঁর জাদু নিয়ে ডিভিডিও বেরিয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাজিক নামের সেই ডিভিডিতে অংশ নিয়েছে ব্যান্ড দল কোল্ড প্লে, গিনেথ প্যালট্রো আর আমেরিকান র‌্যাপার স্নুপ ডগের মতো তারকারা। তাঁর প্রকাশিত আরেকটি ডিভিডি হলো, 'কংক্রিট প্লে গ্রাউন্ড'। তবে তাঁর সবচেয়ে বিস্ময়কর কীর্তিটি করেছেন ২৭ জুন। হেঁটে হেঁটে টেমস নদী পার হয়েছেন তিনি। তখন ব্রিজের ওপর হাজারো মানুষ। তাঁরা নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করছেন, কিভাবে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব! তিনি যখন নদীর ওপর দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের দিকে যাওয়া শুরু করলেন, সত্যিই চারপাশের পরিবেশ হতবাক হয়ে গিয়েছিল। ব্রিজের ওপর দাঁড়ানো এক নারী বলেছিলেন, আমার মনে হয়েছিল, যিশু পানির ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। আরেকজনের অভিমত ছিল, তাঁকে পানির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তবে এর কোনোটিই সত্য নয়। ডায়নামো নিজের জাদুবিদ্যা দিয়েই এই অসম্ভব কাজটি করেছেন। ৭ জুলাই টিভিতে শুরু হচ্ছে তাঁর নতুন শো ডায়নামো : মিশন ইম্পসিবল। সেখানে হাজির হবেন ম্যানচেস্টারের কিংবদন্তি রক গায়ক ইয়ান ব্রাউন, গায়িকা নাতালি ইমবার্গলিয়া এবং ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট বঙ্ংি চ্যাম্পিয়ন ইয়ান হায়ের মতো তারকারা। সেই অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ের জন্যই এই আয়োজন। কিভাবে এই কাজটি সম্ভব হয়েছে সে কথা কোনোভাবেই প্রকাশ করেননি তিনি। তবে আগে থেকেই এই কাজের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল পোর্ট অব লন্ডন কর্তৃপক্ষের। তারা এ কারণে কোনো বাধা দেয়নি। ডায়নামো আস্তে আস্তে নদীর মাঝ বরাবর হেঁটে গিয়েছেন, ছবি তোলার জন্য পোজ দিয়েছেন এবং একসময় পুলিশের একটি স্পিডবোট তাঁকে তুলে নিয়েছে। নতুন শোতে জাদুর আরো কারিকুরি দেখাবেন তিনি। এর মধ্যে আছে বিয়ারের বোতলের মধ্যে আস্ত মোবাইল ফোন ঢুকিয়ে বের করা, কুড়িয়ে পাওয়া তুষারকণা থেকে হীরা তৈরি। ডায়নামোর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে তাঁর চিন্তাধারার একটি সূত্র পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, 'ডায়নামো ওয়ার্ল্ড : নাথিং ইজ ইম্পসিবল'! একেই বলে সাধনার ফল!..কালেন কন্ঠ..

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons