বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে লাঠিপেটা করার পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছে পুলিশ। সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বুধবার রাতে এ মামলা করা হয়।
তবে ফারুকের ওপর পুলিশের হামলার অভিযোগে বিএনপি মামলা করতে চাইলেও থানা মামলা নেয়নি। গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফারুককে ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
শেরেবাংলা নগর থানা সূত্র জানায়, গত বুধবার মধ্যরাতে শেরেবাংলা নগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নাজমুল করিম বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন। এজাহারে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন, সাংসদ আশিফা আশরাফীসহ আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বুধবার মানিক মিয়া এভিনিউতে বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক, আশিফাসহ ১০ থেকে ১২ জন পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও ভয়ভীতি দেখান। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুনুর রশিদ, সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ও থানার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) মারধর করার অভিযোগ আনা হয়।
মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সাংসদ হওয়ার কারণে এ মুহূর্তে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এ জন্য স্পিকারের অনুমতি লাগবে। তবে সরকারকে যাতে কোনোভাবে তিনি বিপদে ফেলতে না পারেন, সে জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
থানা মামলা নেয়নি: গতকাল বেলা তিনটায় লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের বিএনপিদলীয় সাংসদ আশরাফউদ্দিন নিজানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শেরেবাংলা নগর থানায় যান। তাঁরা পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখে থানার অপারেশন কর্মকর্তা তানভীর হাসানের হাতে দেন।
সাংসদ আশরাফউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ ও সহকারী কমিশনার বিপ্লব কুমার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি।
থানার অপারেশন কর্মকর্তা তানভীর হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগপত্রটি তিনি পড়ে দেখেননি। থানার কর্তব্যরত উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেকুল ইসলাম জানান, বিএনপির অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়নি।
তদন্ত কমিটি: বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আবদুল জলিলকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ একটি শৃঙ্খলা বাহিনী। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হয়। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের মতো আমিও বিষয়টি ভালোভাবে দেখছি না। আমরা রাজনীতিবিদদের প্রতি সংবেদনশীল। সরকার পুলিশকে প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।’
বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নিন্দা: জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
প্রথম আলোবিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, এর মাধ্যমে গোটা পুলিশ প্রশাসনকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। তিনি দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এ হামলা চালিয়েছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বিবৃতিতে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ওপর পুলিশের এমন মারমুখী আচরণ অতীতের সরকারগুলোর সময়েও হয়েছে। সংসদীয় রাজনীতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এই আচরণ কাম্য নয়।
বিজেপির সভাপতি আন্দালিব রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শামিম আল মামুন, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, এক হাজার ১১১ জন চিকিৎসক, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ঢাকা মহানগর বিএনপি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলও এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে




৬:৪৯ PM
Akashnill

Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন