শনিবার, ২ জুলাই, ২০১১

চুড়িওয়ালার বেশে ফেনসিডিল ব্যবসা

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া কামাল খান
'চুড়ি নিবেন চুড়ি? লাল, নীল, কালো, সাদা_যা চান তাই পাবেন।' এটাই একজন চুড়ি বিক্রেতা ফেরিওয়ালার ডাক। কিন্তু র‌্যাব-৩-এর সদস্যরা দেখতে পেলেন, একজন চুড়িওয়ালা কাঁধে চুড়ির বোঝা নিয়ে যাচ্ছে, অথচ কোনো ধরনের হাঁক দিচ্ছে না। বরং ভয়ে এদিক-ওদিক চেয়ে হাঁটছে। সন্দেহবশত তাকে থামিয়ে চুড়ির কার্টনগুলো তল্লাশি করতে চাইলে চুড়িওয়ালা নির্বিঘ্নে তা নামিয়েও দেয়। এরপর তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায়, কার্টনের ওপর সারিবদ্ধভাবে চুড়ি সাজানো। ওপরের কার্টনটি ওঠাতে বললেই বেরিয়ে এল আসল ঘটনা। র‌্যাবের সদস্যরা দেখতে পেলেন, লোকটি চুড়িওয়ালার বেশে ফেনসিডিল ব্যবসায়ী। কামাল খান (৩৫) নামের ছদ্মবেশী ওই ফেনসিডিল ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
র‌্যাব-৩-এর মেজর এমারত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কামাল মূলত একজন পাইকারি ফেনসিডিল বিক্রেতা। রাজধানী এবং এর আশপাশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সে চুড়ি বিক্রির নাম করে ছদ্মবেশে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছিল। সে রাজশাহীর ভারতীয় সীমান্ত এলাকার কাশিয়াডাঙ্গা থেকে ফেনসিডিল কম দামে কিনে এনে ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় চড়া দামে বিক্রি করে আসছিল। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তার ক্রেতা ছিল। অন্য জেলার বাসিন্দা হয়ে ছদ্মবেশে সে মাদক ব্যবসা করত।'
গ্রেপ্তারকৃত কামাল র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ছয় মাস ধরে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিল এনে সে ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় বিক্রি করছে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার বাহাড়া খানপাড়া এলাকায়। শুধু ফেনসিডিল ব্যবসার জন্য সে কেরানীগঞ্জ এলাকায় বাসা ভাড়া করে ছিল। চুড়িওয়ালার বেশে ফেনসিডিল বহন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোনো সন্দেহ করেন না; এ কারণে সে এ কৌশলে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছিল। এর আগে সে আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার কাছে ধরা পড়েনি। তার ক্রেতা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী। প্রতি বোতল ফেনসিডিল ভারত থেকে এক-দেড় শ টাকায় কিনে ক্রেতাদের কাছে বারো-চৌদ্দ শ টাকায় বিক্রি করত সে। ফেনসিডিল বিক্রির টাকা সে গ্রামের বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের জন্য পাঠাত।
র‌্যাব-পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে লোকাল বাসে চলাফেরা করত কামাল। সীমান্ত থেকে ঢাকায় আসতে তার দুই থেকে তিন দিন লেগে যায়। এভাবে ফেরিওয়ালার বেশে পথ চলতে তার সমস্যায় পড়তে হতো না। বিভিন্ন জেলায় সে পরিচিত লোকজনের আশ্রয়ে থাকত। চুড়ির পোঁটলার ভেতরে ১৫০ থেকে ২০০ বোতল ফেনসিডিল বহন করত সে।
ফেনসিডিল আকারে বড় হওয়ায় অনেক মাদক ব্যবসায়ী এখন ফেনসিডিল থেকে ইয়াবা ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছে_এমন প্রশ্নের জবাবে কামাল র‌্যাবকে জানায়, ফেনসিডিলের দাম বেশি, তাই ঝুঁকি হলেও এই অভিনব কায়দায় ব্যবসায় তাড়াতাড়ি লাভবান হওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে ফেনসিডিল বহনের আরো কিছু অভিনব পন্থার কথা উল্লেখ করে। তার মতে, মোটা বিদ্যুতের তারের ভেতর, মাটির হাঁড়িতে দই বহনের মতো করে, গাড়ির সিটের নিচে অভিনব কায়দায় ফেনসিডিল বহনে ঝুঁকি কম।
র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর এমারত জানান, গত ২৩ জুন র‌্যাবের একটি টহলদল কেরানীগঞ্জ থানাধীন পূর্ব চরআইল খোকন চেয়ারম্যানের গলি এলাকায় অবস্থান করছিল। এ সময় কাঁধে সাদা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে এক যুবককে হেঁটে যেতে দেখা যায়। দেখে মনে হয় চুড়িওয়ালা। কিন্তু তার আচরণ চুড়িওয়ালার মতো না হওয়ায় সন্দেহ হয়। এ সময় তাকে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে পোঁটলার ওপর সারিবদ্ধ চুড়ি আর তার নিচে ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এরপর ১৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ কামাল নামের ওই ছদ্মবেশী চুড়িওয়ালাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে খোকন চেয়ারম্যানের গলির জাহাঙ্গীরের বাড়ির (পাঁচ তলা) নিচ তলায় ভাড়া থাকত।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons