রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১১

মাথায় ইট পড়ে রাস্তায় মারা গেলেন যুবকটি

অসুস্থ মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। মাকে দেখে হেঁটে আবার বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু নির্মাণাধীন ভবন থেকে একটি ইট মাথায় পড়ে থামিয়ে দিল তাঁর জীবনের চাকা। যুবকটি মারা গেলেন রাস্তাতেই। শেষ হয়ে গেল ২১ বছর বয়সী এক যুবকের একটি সম্ভাবনাময় জীবন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালের পাশে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবকের নাম হাবিবুর রহমান। তেজগাঁও কলেজ থেকে এ বছর তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, হাবিবুর বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজধানীর পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। গতকাল তিনি তাঁর অসুস্থ মাকে দেখতে শমরিতা হাসপাতালে যান। সেখান থেকে দুপুর ১২টার দিকে বের হয়ে তিনি হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন। এ সময় হাসপাতালটির বাঁ পাশে সাগুফতার ১৮ তলাবিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবন থেকে একটি ইট তাঁর মাথার ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ভবনের শ্রমিক মিজান হোসেন, জোনাথ, ইয়াকুব মিয়া, এবাদুল হক ও আশফাকুল ইসলামকে আটক করেছে।
নিহত যুবকের বাবা আবু কালাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে হাবিবুর ছিলেন বড়। হাবিবুরের মা মঞ্জু আরা বেগম ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১০-১২ দিন ধরে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁরা বাবা ও ছেলে সময় ভাগ করে হাসপাতালে থাকতেন। গতকাল তাঁরা দুজন হাসপাতালে আসেন। দুপুরের দিকে তিনি হাবিবুরকে বাসায় গিয়ে গোসল ও খাওয়াদাওয়া করে আবার হাসপাতালে আসতে বলেন। এ জন্য হাবিবুর বাসায় যাচ্ছিলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘একটি ইট কেন কেড়ে নেবে আমার পরিবারের সব স্বপ্ন? কে এর জবাব দেবে?’
নিহত যুবকের ছোট খালা মাহিনুর বলেন, হাবিবুর তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে তেজগাঁও কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এবার তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। মাহিনুর বলেন, হাবিবুরের স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, এর আগেও ওই সাগুফতা ভবনটিকে ঘিরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। মাস দুয়েক আগে ওই ভবনের এক শ্রমিক ওপর থেকে পড়ে মারা যান। ১৫-২০ দিন আগে একটি পাথরখণ্ড ওপর থেকে পড়েছিল। তবে কেউ না থাকায় হতাহত হয়নি। গতকালও ঘটনার সময় ভবনটির সামনে কোনো নিরাপত্তার জাল ছিল না। গতকালের দুর্ঘটনার পরপর সাগুফতার শ্রমিক ও কর্মচারীরা তড়িঘড়ি করে ভবনটির সামনে নিরাপত্তার জাল লাগিয়ে দেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাগুফতার বিপণন ব্যবস্থাপক আবু শোয়েব খান বলেন, সাগুফতার ভবন থেকে ইট পড়েনি। পাশেই আরও একটি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। সেখান থেকে ইট পড়তে পারে। তা ছাড়া ভবনের ১০ তলার ভেতরের দিকে টাইলসের কাজ চলছিল। ইটের কোনো কাজ চলছিল না।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, সাগুফতার পাশের নির্মাণাধীন ভবনের নিচে কয়েকটি নিরাপত্তা টিন দেওয়া থাকলেও সাগুফতার এমন কিছু ছিল না। সাগুফতার নির্মাণাধীন ভবনটির নিচে কয়েকটি শুকনো বাঁশের ওপর রক্তের দাগ দেখা গেছে। ভবনের বিভিন্ন তলায় অগোছালোভাবে ইটের স্তূপ, টাইলসের জিনিসপত্র, পাইপসহ বিভিন্ন যন্ত্র বিশৃঙ্খলভাবে পড়ে ছিল।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউজ্জামান জানান, সাগুফতা ভবনের ১০ ও ১১ তলায় কাজ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুই তলার যেকোনো একটি থেকে ইটটি পড়তে পারে। ওসি জানান, ওই ভবনের সামনে নিরাপত্তা হিসেবে একটি জাল দেওয়া থাকলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। ভবনমালিকদের গাফিলতির বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রথম আলো

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons