রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১১

 কর্তৃপক্ষের ভুল, মাশুল গুনছে শিক্ষার্থীরা

মিরাজ হোসেন, রিপন হোসেন, আলাউদ্দিন, আবদুস সালাম—এঁরা সবাই কর্মজীবী তরুণ। সংসারের দৈন্যদশা ঘুচাতে কাজে নেমেছিলেন অল্প বয়সে। কিন্তু মনে পড়াশোনার সুপ্ত বাসনাটা ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) স্কুল শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। দিয়েছিলেন এসএসসি পরীক্ষা।
কিন্তু বাউবি কর্তৃপক্ষ তাঁদের পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে অনুত্তীর্ণ দেখানো হয়েছে সবাইকে। এখন তাঁরা কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না। এদিকে সঠিক ফলাফলও পাচ্ছেন না। এতে এই তরুণদের পড়ার স্বপ্নসাধ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে। এই অবস্থা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ৪৪ জন দরিদ্র ও কর্মজীবী শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েও ফেল করেছেন। কারণ, কাগজে-কলমে তাঁরা পরীক্ষাই দেননি। তাঁদের কৃষিশিক্ষায় অনুপস্থিত দেখিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেছে বাউবি। অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাঁরা সবাই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এবং তাঁদের পরীক্ষার খাতাও বাউবিতে জমা দেওয়া হয়েছে। তার পরও কেন তাঁদের অনুপস্থিত দেখানো হলো, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ২০০৯ সালে তাঁরা কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (বাউবির শাখা) ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর কাজের অবসরে পড়ালেখা করে প্রথম বর্ষের পাঁচটি পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০১১ সালে দ্বিতীয় বর্ষের পাঁচটি বিষয়েও পরীক্ষা দেন তাঁরা। গত মাসে প্রকাশিত ফলাফলে তাঁদের ৪৪ জনকে কৃষিশিক্ষায় অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। এই ফলাফলের পর তাঁরা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে যান। শিক্ষকেরা জানান, পরীক্ষার খাতা যথানিয়মে জমা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকেরা বাউবিতে যোগাযোগ করেছেন। আশা করছেন, সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এভাবে নানা অজুহাতে তাঁদের ঘোরানো হচ্ছে। শিক্ষকেরা নানা আশ্বাস দিলেও তাঁরা সঠিক ফলাফল পাচ্ছেন না। যে কারণে কোনো কলেজেও ভর্তি হতে পারছেন না তাঁরা। ইতিমধ্যে কলেজগুলোয় ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রিপন আলী নামের একজন শিক্ষার্থী জানান, তিনি অর্থাভাবে পড়ালেখা ছেড়ে অন্যের স্টুডিওতে কাজ করতেন। এখন নিজে একটি দোকান দিয়েছেন। কাজের অবসরে পড়ালেখা করেছেন। আশা ছিল, পাস করতে পারলে কলেজে ভর্তি হবেন। আলাউদ্দিন নামের আরেক শিক্ষার্থী জানান, তিনিও দোকানে কাজ করেন। পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বোর্ডের ভুলের কারণে তাঁদের পড়ালেখা বন্ধ হতে চলেছে।
কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটচাঁদপুর শাখার সমন্বয়ক শাহ সুলতান আহম্মেদ জানান, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পরীক্ষার পর তাঁরা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয়ে খাতাও জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেখান থেকে কেন এভাবে অনুপস্থিত দেখানো হলো, তা বুঝতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে সঠিক ফলাফল পেতে পারে, সে জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এখনো ফলাফল পাননি।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান জানান, একটা ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে শিক্ষার্থীরা যাতে সঠিক ফলাফল পেতে পারেন, সে ব্যাপারে তাঁরা কাজ করছেন।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons