বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১১

এজলাসে ছাতা মাথায় বিচারকাজ!


যশোর জেলা ও দায়রা জজ ভবনের ছাদ চুইয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। হিসাব শাখার কর্মীরা কক্ষের ভেতরে ছাতা মাথায় কাজ করছেন। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। শুধু তাঁরাই নন, এজলাসে বিচারককেও ছাতা মাথায় পরিচালনা করতে হয় বিচারিক কাজ। ছবিটি গতকাল তোলা
প্রথম আলো
যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরোনো ভবনের ছাদ চুইয়ে ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ছে। পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এবং আদালতের মূল্যবান সম্পদ; বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা ও দায়রা জজ মো. আজিজুল ইসলাম এজলাসে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। ছাদের চুইয়ে পড়া বৃষ্টির পানি থেকে কাগজপত্র বাঁচাতে একজন কর্মচারী বিচারকের মাথার ওপর ছাতা ধরে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। এজলাসের সামনে অন্তত ২০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ছাদ চুইয়ে পড়া পানিতে ভিজে তাঁদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন। একই অবস্থা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও। বৃষ্টির পানি পড়ায় বিচারক দিলরুবা সুলতানা ঘণ্টা খানেকের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করে এজলাস ছেড়ে যান।
আদালতের নাজিরখানা, ভার্নাকুলার ও হিসাব শাখায় গিয়ে দেখা যায়, দপ্তরের কম্পিউটার টেবিল, দালিলিক নথিপত্র রাখার কাঠের আলমারি ও তাক পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ছাদ চুইয়ে টুপ-টাপ করে পানি পড়ছে। মেঝের স্থানে স্থানে সেই পানি জমেছে। একটি টেবিলের পাশে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মাথার ওপর ছাতা ধরে কাজ করতে দেখা গেল।
জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব প্রথম আলোকে জানান, প্রায় আট বছর ধরে ভবনটির এই দশা। আগে ততটা সমস্যা না হলেও এখন একটু বেশি বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। তিনি আরও জানান, ভবনের এ দুরবস্থার কথা জানিয়ে একাধিকবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মিয়াজী শহিদুল আলম চৌধুরী গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে একটি চিঠি পাঠান।
চিঠিতে বলা হয়, ‘যশোর জজশিপের পুরোনো একতলা ভবনের স্থাপত্য ও সৌন্দর্য বজায় রেখে নষ্ট হওয়া কড়িবর্গার ছাদ ফেলে কংক্রিটের (রড, সিমেন্ট) ছাদ নির্মাণসহ ভবনটি দোতলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।’
ওই নির্দেশনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তর যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশীষ ডি কস্টা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি দেওয়ার পর স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের কাছে ভবনের বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শনের ছবি চাওয়া হয়। আমরা তাদেরকে তা দিই। এরপর স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে একটি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে। কিন্তু এখনো ভবন নির্মাণের নকশা দেওয়া হয়নি। স্থাপত্য সৌন্দর্য বজায় রাখার নির্দেশনা থাকার কারণে গণপূর্ত অধিদপ্তর অবকাঠামোগত নকশা তৈরি করতে পারেনি। এ কারণে গণপূর্ত বিভাগ যশোর কার্যালয় থেকে খরচের বিবরণীও পাঠানো সম্ভব হয়নি। মূলত স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে নকশা না দেওয়ার কারণেই সংস্কারকাজ আটকে আছে।
এদিকে গত ২৭ জুলাই আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিচারিক হাকিমদের জন্য নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করতে যশোরে আসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি জানান, যশোর জেলা জজ আদালতের ভবনের নষ্ট হওয়া ছাদ নির্মাণখরচের বিবরণী মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিবরণী পাঠানোর ১০ দিনের মধ্যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
গণপূর্ত অধিদপ্তর যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশীষ ডি কস্টা বলেন, শিগগিরই খরচের বিবরণী গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তা ৎক্ষণিক সমাধানের জন্য শুধু নষ্ট হওয়া ছাদ নির্মাণের খরচের বিবরণী পাঠাতে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে স্থাপত্য সৌন্দর্য বজায় রাখা কতটা সম্ভব হবে সেটি বলা মুশকিল।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons