শিরিন আক্তারমাদারীপুর সদর উপজেলায় গ্রাম্য সালিসে অপমানিত হয়ে গত শুক্রবার ক্ষোভে-দুঃখে আত্মহত্যা করেছে এক মাদ্রাসাছাত্রী। এ ঘটনায় সালিসে নেতৃত্ব দেওয়া দুধখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মহসিন বেপারীকে আটক করেছে পুলিশ।
মেয়েটির নাম শিরিন আক্তার (১৫)। বাড়ি দুধখালীর এওজ গ্রামে।
গতকাল শনিবার বিকেলে এওজ গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, শিরিনের বাবা হাসেম শরীফ বছর খানেক আগে মারা যান। শিরিনের একমাত্র ভাই মুর্তজা শরীফ যশোরের বেনাপোলে কাজ করেন। অপর এক বোন স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। শিরিনের পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক সম্প্রতি সহায়তাস্বরূপ তাদের তিনটি ছাগল দেয়। এ ছাড়া শিরিনদের আরও তিনটি ছাগল আছে। ছয়টি ছাগলের দেখভাল করত শিরিন। পাশাপাশি গ্রামের বড়াইলবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণীতে পড়ত।
শিরিনের ভাই মুর্তজা শরীফ, খালাতো ভাই সবুর খান ও খালাতো বোন মেঘনা আক্তার বলেন, গত বৃহস্পতিবার শিরিনের একটি ছাগল প্রতিবেশী শাহ আলম হাওলাদারের চারা আমগাছের পাতা খেয়ে ফেলে। এর জের ধরে শিরিনের পায়ে লাঠি দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন শাহ আলম।
গ্রামবাসী বলেন, শিরিন প্রতিবাদী ও অভিমানী ছিল। শাহ আলম তাকে লাঠি দিয়ে পেটালে সে হাতের মুঠোফোন তাঁর দিকে ছুড়ে মারে।
এ ঘটনা শিরিন তার মা হাজেরা খাতুনকে জানালে তিনি দুধখালী ইউপির সাবেক সদস্য মহসিন বেপারীর কাছে নালিশ করেন। পরদিন শুক্রবার সকালে গ্রামে সালিস বসে। এতে মহসিন বেপারীর নেতৃত্বে সালিসে ছিলেন আক্কাস বেপারী, আক্কাস চৌকিদার, রশিদ আকনসহ ১০-১২ জন। মাতব্বররা সালিসে শিরিনকে দোষী সাব্যস্ত করে শাহ আলমের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন। শিরিন প্রতিবাদ করলে এক মাতব্বর উল্টো তাঁকে চড় মারেন। পরে শাহ আলমের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় শিরিন।
শিরিনের মা কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, শাহ আলমের পা ধরার সময় আমার মেয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে। পরে ঘরে এসে বিছানায় শুয়েও কান্নাকাটি করে। আমি পাশের বাড়ি গিয়েছিলাম। সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরে এসে দেখি, ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শিরিনের লাশ ঝুলছে।
খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে শিরিনের লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর থানার পুলিশ। গতকাল মাদারীপুর সদর হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
শিরিনের মৃত্যুর জন্য সাবেক ইউপি সদস্য মহসিন বেপারীসহ সালিসকারীদের দায়ী করে তাদের শাস্তি দাবি করেছে তার পরিবার। আটক হওয়ার আগে মহসিন বেপারী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সালিস করেছি সত্য। শিরিন শাহ আলমের দিকে মুঠোফোন ছুড়ে মারায় তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। কিন্তু সালিসে শিরিনের গায়ে হাত তুলিনি।’
শিরিনের পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করা সত্ত্বেও শাহ আলমকে শাস্তি না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মহসিন বলেন, ‘সালিসে আমিই সবচেয়ে কম বয়সী ছিলাম। অন্য মুরব্বিরা শাহ আলমকে কোনো শাস্তি দেননি।’
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় গিয়ে জানতে পেরেছি যে সালিসে অপমানিত হয়েই শিরিন আত্মহত্যা করেছে। সালিসকারীরা রায় দিয়ে বলেন, “শিরিনই অন্যায় করেছে এবং তাকে শাহ আলমের পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে।” সালিসে সমবয়সী ছেলেমেয়েসহ এলাকার লোকজন থাকায় অপমানিত হয় শিরিন। সে সালিসে বলেছিল, “আমি কোনো অন্যায় করিনি। যে অন্যায় করেছে, আমাকে মারধর করেছে; তার কাছেই আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে?” এই বলে সে সালিসে অনেক কান্নাকাটি করেছে।’
ওসি বলেন, সালিসকারীদের প্রধান মহসিন বেপারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তবে শিরিনের পরিবার সালিসকারীদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এর আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সালিসে অপমান ও সমাজচ্যুত করার পর ১৫ আগস্ট চার সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছিলেন হবিগঞ্জের ফেরদৌসী বেগম। এতে তিনি ও তাঁর দুই সন্তান মারা যায়। প্রথম আলো
মেয়েটির নাম শিরিন আক্তার (১৫)। বাড়ি দুধখালীর এওজ গ্রামে।
গতকাল শনিবার বিকেলে এওজ গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, শিরিনের বাবা হাসেম শরীফ বছর খানেক আগে মারা যান। শিরিনের একমাত্র ভাই মুর্তজা শরীফ যশোরের বেনাপোলে কাজ করেন। অপর এক বোন স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। শিরিনের পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক সম্প্রতি সহায়তাস্বরূপ তাদের তিনটি ছাগল দেয়। এ ছাড়া শিরিনদের আরও তিনটি ছাগল আছে। ছয়টি ছাগলের দেখভাল করত শিরিন। পাশাপাশি গ্রামের বড়াইলবাড়ী দাখিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণীতে পড়ত।
শিরিনের ভাই মুর্তজা শরীফ, খালাতো ভাই সবুর খান ও খালাতো বোন মেঘনা আক্তার বলেন, গত বৃহস্পতিবার শিরিনের একটি ছাগল প্রতিবেশী শাহ আলম হাওলাদারের চারা আমগাছের পাতা খেয়ে ফেলে। এর জের ধরে শিরিনের পায়ে লাঠি দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন শাহ আলম।
গ্রামবাসী বলেন, শিরিন প্রতিবাদী ও অভিমানী ছিল। শাহ আলম তাকে লাঠি দিয়ে পেটালে সে হাতের মুঠোফোন তাঁর দিকে ছুড়ে মারে।
এ ঘটনা শিরিন তার মা হাজেরা খাতুনকে জানালে তিনি দুধখালী ইউপির সাবেক সদস্য মহসিন বেপারীর কাছে নালিশ করেন। পরদিন শুক্রবার সকালে গ্রামে সালিস বসে। এতে মহসিন বেপারীর নেতৃত্বে সালিসে ছিলেন আক্কাস বেপারী, আক্কাস চৌকিদার, রশিদ আকনসহ ১০-১২ জন। মাতব্বররা সালিসে শিরিনকে দোষী সাব্যস্ত করে শাহ আলমের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন। শিরিন প্রতিবাদ করলে এক মাতব্বর উল্টো তাঁকে চড় মারেন। পরে শাহ আলমের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় শিরিন।
শিরিনের মা কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, শাহ আলমের পা ধরার সময় আমার মেয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে। পরে ঘরে এসে বিছানায় শুয়েও কান্নাকাটি করে। আমি পাশের বাড়ি গিয়েছিলাম। সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরে এসে দেখি, ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শিরিনের লাশ ঝুলছে।
খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে শিরিনের লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর থানার পুলিশ। গতকাল মাদারীপুর সদর হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
শিরিনের মৃত্যুর জন্য সাবেক ইউপি সদস্য মহসিন বেপারীসহ সালিসকারীদের দায়ী করে তাদের শাস্তি দাবি করেছে তার পরিবার। আটক হওয়ার আগে মহসিন বেপারী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সালিস করেছি সত্য। শিরিন শাহ আলমের দিকে মুঠোফোন ছুড়ে মারায় তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। কিন্তু সালিসে শিরিনের গায়ে হাত তুলিনি।’
শিরিনের পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করা সত্ত্বেও শাহ আলমকে শাস্তি না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মহসিন বলেন, ‘সালিসে আমিই সবচেয়ে কম বয়সী ছিলাম। অন্য মুরব্বিরা শাহ আলমকে কোনো শাস্তি দেননি।’
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় গিয়ে জানতে পেরেছি যে সালিসে অপমানিত হয়েই শিরিন আত্মহত্যা করেছে। সালিসকারীরা রায় দিয়ে বলেন, “শিরিনই অন্যায় করেছে এবং তাকে শাহ আলমের পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে।” সালিসে সমবয়সী ছেলেমেয়েসহ এলাকার লোকজন থাকায় অপমানিত হয় শিরিন। সে সালিসে বলেছিল, “আমি কোনো অন্যায় করিনি। যে অন্যায় করেছে, আমাকে মারধর করেছে; তার কাছেই আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে?” এই বলে সে সালিসে অনেক কান্নাকাটি করেছে।’
ওসি বলেন, সালিসকারীদের প্রধান মহসিন বেপারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তবে শিরিনের পরিবার সালিসকারীদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এর আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সালিসে অপমান ও সমাজচ্যুত করার পর ১৫ আগস্ট চার সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছিলেন হবিগঞ্জের ফেরদৌসী বেগম। এতে তিনি ও তাঁর দুই সন্তান মারা যায়। প্রথম আলো




৪:৪০ PM
Akashnill
Posted in:
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন