মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১

সোনারগাঁয়ে স্কুলছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় এক স্কুলছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। আরিফ নামের স্থানীয় এক বখাটে তাঁর এক বন্ধুর সহযোগিতায় ওই হয়রানির দৃশ্য ভিডিও করেন। পরে মেয়েটির পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে না পেয়ে ওই ভিডিওচিত্রটি বাজারে ছেড়ে দেন।
গতকাল সোমবার সকালে স্থানীয় জামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের বাড়িতে সালিস বসে। জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সালিসে একই উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মান্নান মিয়া, সাদিপুর ইউপির সাবেক সদস্য জসীম উদ্দিন, স্থানীয় মুছারচর গ্রামের মাতব্বর হুমায়ুন প্রধান, খোকন প্রধান, ফারুক, পরাগ মিয়াসহ গ্রাম্য মাতব্বরেরা উপস্থিত ছিলেন।
সালিসের শুরুতে হয়রানির শিকার ওই স্কুলছাত্রীর বাবার বক্তব্য শোনা হয়। এ সময় মেয়েটির বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। একপর্যায়ে সালিসকারীরা বখাটে আরিফের সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেন। মেয়েটির বাবা বলেন, তাঁর মেয়ে স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। সে মেধাবী। মেয়েকে আরও পড়াশোনা করাবেন তিনি। এ ছাড়া মেয়ের এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।
মেয়েটির বাবার এসব কথা শুনে সালিসকারীদের কয়েকজন তাঁকে মারতে তেড়ে যান। এ সময় অন্যরা প্রতিবাদ করেন। এতে হট্টগোল শুরু হয়।
সালিসকারীরা পরে বখাটে আরিফের (২৫) বক্তব্য শোনেন। আরিফ বলেন, প্রায় দুই মাস আগে মেয়েটি স্কুল থেকে ফেরার পথে তাকে রাস্তার পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আনিস নামে তাঁর এক বন্ধু ওই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিওচিত্রটি স্থানীয় এক ভিডিও ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। ওই ব্যবসায়ী ইন্টারনেটে ও মুঠোফোনে ভিডিওচিত্রটি সব জায়গায় ছড়িয়ে দেন। বখাটে আরিফ বলেন, এ ধরনের কাজ করে তিনি ভুল করেছেন। এখন মেয়েটিকে বিয়ে করে এই ভুলের মাশুল দিতে চান তিনি।
এ সময় সালিসকারীদের কয়েকজন বখাটের সঙ্গে ওই স্কুলছাত্রীর বিয়ের পক্ষে মত দেন। সালিসের এ পর্যায়ে ঢাকা থেকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের একদল সংবাদকর্মী ক্যামেরাসহ সেখানে পৌঁছালে সালিসকারীদের অনেকেই দৌড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সালিসের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা ন্যক্কারজনক। তবুও আমরা চেয়েছিলাম, স্থানীয়ভাবে বিষয়টির মীমাংসা করতে। কারণ, প্রশাসনকে জানালে মেয়েটির হতদরিদ্র পরিবার ওই ছেলেটির প্রভাবশালী পরিবারের কাছে টিকতে পারবে না। এতে মেয়েটিরই বেশি ক্ষতি হবে। সালিসে অনেকে মেয়েটির সঙ্গে ওই ছেলের বিয়ে দেওয়ার পক্ষে মত দেয়।’
বখাটের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে দোষ করেছে। আমার ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে চেয়েছিলাম। এখন মেয়ের পরিবার রাজি হয়নি। জেনেশুনে আমার ছেলে ও ওই মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে রাজি হবে না।’
মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস ধরে বখাটে আরিফ তাঁদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চেয়ে আসছিলেন। পরে তাঁর মেয়েকে আরিফের সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা অস্বীকার করায় পুরো পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়। মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের পুরো পরিবারের আত্মহত্যা করে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইউনুস আলী বলেন, খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ওই বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons