রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০১১

ধর্ষণের শিকার বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার পুনাইল গ্রামের ধর্ষণের শিকার বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী ভুয়া চিকিৎসকের কাছে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে পুলিশ ওই ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে মীমাংসার নামে গ্রামে সালিস বসিয়ে উল্টো ওই মেয়ের অভিভাবকের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে।
সাটুরিয়া থানার পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাকপ্রতিবন্ধী ওই মেয়েটির মাতৃত্বের লক্ষণ ফুটে উঠলে পরিবারের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েটি তাঁর এ অবস্থার জন্য ওই গ্রামেরই হাতেম আলী (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর হাতেম আলী গত শুক্রবার এলাকার প্রভাবশালীদের সহায়তায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে মেয়েটির গর্ভপাত ঘটানোর জন্য তাঁর পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। প্রভাবশালীদের ভয়ে ও পরামর্শে গর্ভপাত ঘটানোর জন্য মেয়েটির মা গত শুক্রবার সকালে মেয়েকে নিয়ে পাশের দরগ্রাম গ্রামের ভুয়া চিকিৎসক উজালা সাহার বাড়িতে যান। ওই বাড়িতে মেয়েটির গর্ভপাত ঘটানোর পর তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই মেয়েটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
পুলিশ জানায়, গর্ভপাত ঘটানোর পর শুক্রবার রাতে প্রভাবশালী সিদ্দিক বেপারী এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে সালিস বসিয়ে ধর্ষক হাতেম আলীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো মেয়েটির বাবার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন।
এক প্রতিবেশী বিষয়টি সাটুরিয়া থানাকে অবহিত করলে সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামসুদ্দিন সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পৃথ্বীস কুমার দত্তকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল দুপুরে মেয়েটির বাড়িতে যান। মেয়েটির অবস্থা দেখে তাঁরা অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে মেয়েটিকে দেখতে হাসপাতালে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম। তিনি মেয়েটির অবস্থা দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল বিকেলেই তাঁকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। এ জন্য আর্থিক সহায়তাও করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এদিকে প্রাথমিক তদন্তে মেয়েটির অভিযোগের সত্যতা পওয়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক উজালা সাহাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগেই ধর্ষক হাতেম আলীসহ বিচারকেরা গা-ঢাকা দেন। পুলিশ উজালার বাড়ি থেকে অপারেশন করার মতো বেশ কিছু সরঞ্জামও উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে গতকাল সাটুরিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ধর্ষক হাতেম আলী, হাতুড়ে চিকিৎসক উজালা সাহা ও বিচারক সিদ্দিক বেপারীসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশি হেফাজতে উজালা সাংবাদিকদের কাছে মেয়েটিকে গর্ভপাত ঘটানোর কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি একটি ক্লিনিকে চাকরি করে কাজ শিখেছেন। বর্তমানে বাড়িতে বসে চিকিৎসা করেন। মেয়েদের গর্ভপাত ঘটানোই তাঁর মূল কাজ। এ জন্য বাড়ির একটি গোপন কক্ষে তিনি অপারেশন থিয়েটারের আদলে চিকিৎসাব্যবস্থা প্রস্তুত রেখেছেন।
সাটুরিয়া থানার ওসি মো. শামসুদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উজালাকে আটক করা হয়। তাঁর বাড়িতে গোপন অপারেশন থিয়েটারেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। অথচ চিকিৎসা করার মতো তাঁর কোনো সনদ নেই।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons