বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১১

ডিবির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণ

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী গত শনিবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে ঢাকার সাভারের একটি হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন।
এ অভিযোগ এনে ওই শিক্ষিকা গতকাল মঙ্গলবার সাভার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। ধর্ষণের পর ওই দুর্বৃত্তরা শিক্ষিকার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকারও লুটে নেয়। ওই শিক্ষিকা বর্তমানে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষিকা বলেন, গত শনিবার বিদ্যালয়ের কাজে তিনি ঢাকায় যান। ঢাকা থেকে বাসায় ফেরার পথে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি গাবতলী থেকে ভিলেজ লাইন পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ার আগ মুহূর্তে তাঁর পাশে গিয়ে বসেন অপরিচিত এক লোক। বাসটি সাভারের দিকে কিছুদূর যাওয়ার পরই ওই লোকটি নিজেকে ডিবির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাঁকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই লোকটি তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী বলে সাভার বাসস্ট্যান্ডে ডিবির কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করার কথা বলেন।
শিক্ষিকা নিজের পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তির কথার প্রতিবাদ করলে লোকটি তাঁকে গুলি করার হুমকি দেন। শিক্ষিকা ভয়ে লোকটির কথামতো সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাস থেকে নামেন। এর পর ওই লোকটি তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার কথা বলে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে একটি হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করে হত্যার হুমকি দিয়ে লোকটি তাঁকে ধর্ষণ করেন। এর কিছুক্ষণ পর ওই কক্ষে যান আরও এক ব্যক্তি। তিনিও তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে ওই দুই দুর্বৃত্ত শিক্ষিকার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ১০ হাজার টাকা ও প্রায় এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে হোটেল থেকে তাড়িয়ে দেন।
ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষিকা প্রথম আলোকে বলেন, চলন্ত বাসে ডিবির কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই প্রতারকের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে তাঁর বাগিবতণ্ডা চলার সময়ে বাসের অন্য যাত্রীরা তাঁকে কোনো সহায়তা করেননি। যাত্রীদের সহায়তা না পেয়ে তিনি তাঁর ছোট ভাইয়ের (রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল) সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এ সময় ওই প্রতারক তাঁর কাছ থেকে মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অনেকটা ঘাবড়ে গিয়ে তিনি ওই প্রতারকের কথামতো বাস থেকে নেমে হোটেলে যান।
শিক্ষিকা বলেন, আকস্মিক ওই ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে তিনি প্রথমে বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁর পুলিশ ভাইকে বিষয়টি জানালে তাঁর পরামর্শে গতকাল তিনি সাভার থানায় মামলা করতে যান।
ওই শিক্ষিকা বলেন, গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি সাভার থানায় গিয়ে থানার দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হোসেনকে জানান। কিন্তু ওই কর্মকর্তা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তাঁকে তাঁর কক্ষে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন।
দুপুর ১২টার দিকে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদক সাভার থানায় গিয়ে বিষয়টি জানার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামানকে জানান। ওসি ঘটনা শুনে শিক্ষিকার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে তাৎক্ষণিক বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন ওই এসআই আবুল হোসেনকে।
দুপুর পৌনে একটার দিকে এসআই আবুল হোসেন বিষয়টি তদন্তের জন্য শিক্ষিকাকে নিয়ে ওই হোটেলে যান। পুলিশ হোটেলের মালিক সিদ্দিকুর রহমানের ভাই আবদুস ছালাম ও ভগ্নিপতি ফরিদ আহাম্মেদকে আটক করেন। ছালামকে ছেড়ে দিয়ে পুলিশ ফরিদকে থানায় নিয়ে যান। এর আগেই হোটেলের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন পালিয়ে যান।
আবদুস ছালাম নিশ্চিত করেন, ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে দুই ব্যক্তি তাঁদের হোটেলে এসেছিলেন।
সাভার থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রচলিত আইনে মামলা করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষিকার ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons