সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১১

লাশ শত টুকরা করে মেঘনায় নিক্ষেপ!

‘স্যার, ফরিদ আমরার লগে বেইমানি করছে। ডাকাতি ছাইড়া পুলিশের খেদমতদার হইছে। আমরার ক্ষেপের কথা পুলিশকে জানাইয়া দেয়। আমরার লগে থাকব না, ভালা কথা। পুলিশের সোর্স হইলে কেন? তাইজ্জব ব্যাপার, হে আমরারে র‌্যাব-পুলিশের ডর দেহায়। কাজ না কইরা কাজের ভাগ চায়। কাজ করুম আমরা, হেরে ভাগ দিমু কেন? তার চেয়ে ভালা, হেরে ভাগ কইরা মাছের আদার (খাবার) বানাইয়া ফালামু। তা হইলেই তো ঝামেলা খতম। স্যার, কম কইরা হইলেও ১০০ টুকরা করছি। মেঘনায় ছাড়ামাত্র মাছ ঠুকুর মাইরা খাইতে থাহে।’
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ফরিদ হত্যায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি তাহের মিয়া ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে এবং ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সময় হত্যার লোমহর্ষক এসব বর্ণনা বের হয়ে আসে। কাসেম ওরফে কাচ্চু মিয়ার ছেলে তাহের মিয়া (৪৪) উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ফরিদ মিয়া (৫৫) হত্যার অন্যতম আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় হত্যা, লাশ গুম, ডাকাতিসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে।
পুলিশ গত শনিবার ভোরে মেঘনা নদীর একটি নৌকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাহের ভৈরব থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের খুনের বর্ণনা দেন। পরে তাঁকে ওই দিন বিকেলে কিশোরগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আইজ উদ্দিনের কাছে ওই দিন তাহের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
ভৈরব থানার পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ২৬ আগস্ট উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মৃত কাদির মিয়ার ছেলে ফরিদ মিয়া নিখোঁজ হন। পরিবারের সদস্যরা লোকমুখে জানতে পারেন, ফরিদকে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে তাঁর স্ত্রী সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে হত্যা এবং হত্যাসহ লাশ গুমের অভিযোগে মামলা করেন। এরপর পুলিশ শনিবার সন্দেহভাজন তাহেরকে গ্রেপ্তার করে।
তাহের মিয়া জানান, একই এলাকার ছিদ্দিক, মস্তু, হুমায়ুন, ফরিদ তাঁরা ভালো বন্ধু। ডাকাতি, হত্যা, লাশ গুম তাঁদের পেশা। এক বছর আগে ফরিদ তাঁদের সঙ্গ ছাড়ে। দলছুট হওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে ফরিদের সখ্য গড়ে ওঠে। তাঁদের সব গোপন বিষয় পুলিশের কাছে ফাঁস হয়ে যায়। একপর্যায়ে ফরিদ মাসিক মাসোহারা দাবি করেন। এতেই দলের সবাই তাঁর প্রতি ক্ষিপ্ত হন এবং হত্যার পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার দিন ফরিদকে মস্তুর বাড়িতে ডেকে আনা হয়। কথা বলার সুযোগে ছিদ্দিক বল্লম দিয়ে পেটে আঘাত করেন। তাহের ছুরিকাঘাত করেন এবং মস্তু লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের গ্রামের নবীপুরের তারা মিয়ার নৌকায় করে লাশ মেঘনার মাঝ নদীতে নেওয়া হয়। সেখানে নিয়ে ছুরি দিয়ে প্রথমে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা হয়। কমপক্ষে ১০০ টুকরা করার পর টুকরাগুলো নদীতে ফেলা হয়। এ কাজ করতে তাঁদের সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান কবির বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার পর অনেকটা অনুশোচনা থেকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা অকপটে পুলিশ, সাংবাদিক ও আদালতে বলেন তাহের।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons