বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীর বন্ধুকে ১০১ দোররা

নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় গত শুক্রবার এক গৃহবধূ ও তাঁর স্বামীর বন্ধুকে ১০১টি দোররা মারা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে সে টাকায় করা হয়েছে ভূরিভোজ।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই গৃহবধূর স্বামীর বন্ধু স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাঁর ঘরে গেলে দুজনের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তোলেন গ্রাম্য মাতবর আফজল হোসেন। পরদিন সালিস বৈঠকে গৃহবধূ ও যুবককে দোররা ও জরিমানার শাস্তি দেওয়া হয়। যুবকের সাড়ে চার হাজার টাকা ও গৃহবধূর ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার ওই এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রতিবেশী যুবক ওই গৃহবধূর ঘরে তাঁর সঙ্গে গল্প করছিলেন। এ সময় ওই বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় প্রতিবেশী আফজাল তাঁদের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে যুবককে আটক করে হইচই শুরু করেন।
গতকাল দুপুরের দিকে ওই গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ‘আসছি’ বলে চলে যান। পরে প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ সময় গৃহবধূর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা রাজি হননি। গৃহবধূর একাধিক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্বামীর বন্ধু বলে গৃহবধূ ওই যুবকের সঙ্গে ঘরে বসে পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। গ্রামের মাতবর বলে পরিচিত আফজাল অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে ওই যুবককে আটক করে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। গত শনিবার রাতে সালিসে দুজনকে ১০১টি দোররা মারা হয়। দুজনের কাছ থেকে মোট পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। সেই টাকায় ভূরিভোজ করা হয়েছে।
শনিবার রাতে স্থানীয় একটি বাড়িতে অনুষ্ঠিত সালিস বৈঠকে প্রধান দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় আজিজুল হক। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইছহাক আলী জানান, তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সত্যতা না পেয়ে ওই গৃহবধূ ও যুবককে সামাজিকতা মেনে চলার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরে আফজালসহ অন্যরা সালিস করে গৃহবধূ ও যুবককে শাস্তি দেন।
গৃহবধূকে দোররা মারার রায় দেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার প্রধান নূর আলম। তিনি জানান, গ্রাম্য মাতবর আজিজুল হক, মোফাজ্জল হোসেন, আফজাল হোসেনসহ কয়েকজনের পীড়াপীড়িতে এ রায় দিয়েছেন। নূর আলম আরও জানান, মাতবরেরা থানা-পুলিশ সামাল দেবেন বলায় ওই দুজনকে দোররা মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে গতকাল দুপুরে আফজাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি জরুরি কাজে নওগাঁ শহরে গেছেন। অপর মাতবর আজিজুল হক বলেন, ‘গ্রামে অসামাজিক কিছু হলে তা সমাজের সবার মতামত নিয়ে সমাধান করা হয়। ওই গৃহবধূর ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে।’ জরিমানার টাকায় ভূরিভোজ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিষ্টিমুখ করিয়ে সবাইকে খুশি করা হয়েছে, ওই গৃহবধূর ঘর বাঁচানো হয়েছে।’
অভিযুক্ত যুবক চট্টগ্রাম চলে যাওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর পরিবারের কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি, দোররা মারার বিষয়টি আমার জানা নেই।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Design by Wordpress Theme | Bloggerized by Free Blogger Templates | JCPenney Coupons